দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার লোহাচড়া গ্রামে বসবাস করেন আলেয়া বেগম। স্বামী দিনমজুর সাখোয়াত হোসেন, তার এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে ১০ শ্রেণী, মেজ মেয়ে ৭ম শ্রেণী ও ছোট মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। স্বামীর স্বল্প আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া সহ সংসার চলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এই অসহায় নারী আলেয়া বেগম। হিলির লোহাচড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন শতকের উপর একটি নড়বড়ে মাটির কুড়ে ঘর, বাঁশের উপর বাঁধনি ছাড়া কয়েকটি টিন। একটু ঝড় কিংবা বাতাস হলেই নড়েচড়ে উঠে টিনগুলো, বৃষ্টির পানিও গড়িয়ে প্রবেশ করে ঘরে। বৃষ্টির পানিতে দেওয়ালে যেন ঘুণ ধরেছে, যেকোন সময় ঘটতে পাড়ে দুর্ঘটনা। একটি মাত্র মাটির ঘর, তিন সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী সহ পাঁচ জনের বসবার এই মাটির কুড়ে ঘরে। এই কুড়ে ঘরে শত কষ্টের মাঝেও স্বপ্ন দেখেন আলেয়া বেগম, ছেলে-মেয়েরা লিখাপড়া করে বড় হবে। কিন্তু স্বামীর দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থায় ছেলে মেয়ের লিখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আলেয়ার চিন্তা-ভাবনার শেষ নেই, তিন ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। একটি ঘরে লিখাপড়া সহ বসবাস কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারি কোন সাহায্য সহযোগীতা সে কখনও পায়নি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া হয়নি তাকে কোন সুযোগ-সুবিধা। আলেয়া বেগম পথ চেয়ে আছে সরকার যদি তার এই কুড়ে ঘরের উপর একটি মজবুত ঘর করে দেয়। তাহলে স্বামী সন্তান নিয়ে সে নিরাপদ ও সুখে থাকতে পারবে। আলেয়া বেগম বলেন, আমি খুব অসহায় গরীব মানুষ। সংসারে স্বামীর অল্প কামায়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন মতো দিন কাটাচ্ছি। একটা ঘরে ছেলে-মেয়েদের কোথায় ঘুমাতে আর পড়াশুনা করতে দেয়। আজ আমি বড় বিপাকে পড়ে আছি। তিন সন্তানদের খাওয়া, কাপড় আর পড়াশুনার খরচ চলাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার যদি আমাকে দয়া করে এখানে একটা বাড়ি করে দিতো তাহলে আমার অনেক উপকার হতো। প্রতিবেশী খায়রু ইসলাম জুয়েল বলেন, আমাদের গ্রামের সব চেয়ে অসহায় হতদরিদ্র এই আলেয়া বেগম। অনেক কষ্ট করে তার তিন ছেলে-মেয়েদের লিখাপড়া করাচ্ছেন। থাকার মাত্র একটি ঘর, তাও আবার দুর্বল, যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। সরকারের উচিৎ এই অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য সহযোগীতা করা। হাকিমপুর উপজেলার ১ নং খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাওছার রহমান বলেন, আমি এবার প্রথম এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছি। বিষয়টি আমি জানতাম না, আমি অবগত হলাম। আলেয়া বেগমের জন্য আমি ভিজিডি’র কার্ড করে দিবো এবং তার স্বামী যদি ভ্যান-রিকশা চলাতে পারে তাহলে আমি তাকে তা বানিয়ে দিবো। এছাড়াও পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগীতা সহ সরকারি ঘর পেতে সাহায্য করবো। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, ভুমিহীনদের ক শ্রেণীর ঘরের কাজ চলছে। আগামীতে খ শ্রেণীর ঘর বরাদ্দ আসলে অবশ্যই আলেয়া বেগমকে ঘর করে দেওয়া হবে। এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, সরকার কাউকে ভুমিহীন ও গৃহহীন রাখবেন না। উপজেলায় ক তফসিলের ঘর হয়ে গেছে আরও নির্মাণ হচ্ছে। যারা ভুমিহীন তাদের এই ঘরগুলো দেওয়া হবে। লোহাচড়া গ্রামের অসহায় আলেয়া বেগমের বিষয়টি অবগত হলাম। আগামীতে খ তফসিলের জায়গা আছে ঘর নেই বরাদ্দ আসলেই ঐতালিকায় প্রথমেই এই আলেয়া বেগমের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও আলেয়া বেগমের জন্য সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।