সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

বিধিনিষেধের বিষয়ে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

চলতি বছরের শুরুতে ওমিক্রনের সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতিতে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। ১০ জানুয়ারি হওয়া এই বিধিনিষেধ প্রায় দেড় মাস পরে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখনও মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই ‘বিধিনিষেধ উঠে গেছে’ কথায় সাধারণ মানুষের কাছে ফের ভুল বার্তা যাচ্ছে। যাতে করে সংক্রমণের এই নি¤œগতির স্থায়িত্ব নিয়ে আবার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ওমিক্রনে দেশে মহামারিকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে অবশেষে নি¤œমুখী ধারায় ফিরেছে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার। গত কয়েকদিন ধরেই ওমিক্রনের তা-ব কমতে শুরু করেছে। নি¤œমুখিতার শুরুর দিকে দৈনিক শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল বেশি। তবে সবশেষ পাওয়া ২৪ ঘণ্টার (২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত) তথ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যা কিনা গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি এর আগে এর চেয়ে কম চার জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যু বেড়ে চলছিল। তবে ওমিক্রন দাপটের পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক অংকের সংখ্যায় ৯ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
এদিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, আগের সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় দৈনিক শনাক্ত রোগী ও মৃত্যু-দুটোই কমেছে। অধিদফতর সেদিন জানায়, গত সপ্তাহে (১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি) করোনাতে নতুন শনাক্ত ও মৃত্যু তার আগের সপ্তাহের (৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি) তুলনায় শনাক্ত কমেছে ৫০ শতাংশ আর মৃত্যু কমেছে ৩৬ শতাংশ।
‘করোনার সংক্রমণ এখন নি¤œগামী, কমে যাচ্ছে’ একথা উল্লেখ করেই সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বর্তমান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যা করা হয়েছে সেটা চলতে পারে। কিন্তু বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলো— এই কথাটা ভুল বার্তা বহন করবে।’
মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক বলেন, ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে নিয়মকানুন মানতে হবে। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হলো— সেগুলো জানানো ঠিক আছে, কিন্তু বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলো— এটা বলা ঠিক হয়নি।’ ‘মহামারি শেষ হয়ে গেছে, তাতো নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধের মধ্যেতো মাস্ক পরা রয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিষয় রয়েছে, এগুলোতো বিধিনিষেধই। কিন্তু বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলো বার্তায় সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে।’ ‘মহামারি যতদিন প্রত্যাহার না হয়, ততোদিন বিধিনিষেধ থাকবে’ উল্লেখ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার বিষয়টি এমনভাবে প্রচার হয়েছে, যেন আর কিছুই করতে হবে না। বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলো— এই তথ্যটা ভুল বার্তা দিচ্ছে মানুষকে।’
একই মত কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের। তার কথায়, ‘এর মাধ্যমে একটা নেগেটিভ ম্যাসেজ যাচ্ছে, এটা (বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া) ঠিক হয়নি।’
‘বিধিনিষেধ কখনও কার্যকর ছিল কিনা— সে প্রশ্নও করা যায়’, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে বা যাবে। এমনিতেই মানুষ কোনও নিষেধ মানেনি, এরপর সেটা তুলে দেওয়া মানে মানুষকে মুক্ত করে দেওয়া। টেলিভিশনের করোনা বিষয়ক খবরগুলোতে দেখা যায়, হাট-বাজারে কেবল সাংবাদিক ছাড়া কারও মুখে মাস্ক নেই। বিধিনিষেধ থাকার কারণে মানুষের মনের মধ্যে কিছুটা হলেও সংকোচ ছিল, কিন্তু এখন সেটাও নেই। একে বলা হয় রিলিজ ফেনোমেনা— এটাই হবে এখন।’ এমন সিদ্ধান্তের ফলে ফের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে হুঁশিয়ারি দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যেহেতু এখনও মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সরকারকে এ বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সরকারকে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে, মানুষকে বোঝাতে হবে জীবন ও জীবিকার তাগিদে অন্যান্য বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলেও মাস্ক পরতেই হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে; এর কোনও ব্যত্যয় নেই।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com