‘এখনো জীবিত আছি। দোয়া করো, ইনশাআল্লাহ তোমার কাছে ফিরব।’ স্ত্রীকে সর্বশেষ এই বার্তাই পাঠিয়েছেন রুকুনুজ্জামান রাজীব। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রাশিয়ান সৈন্যদের হামলার শিকার বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির নাবিক তিনি। ওই জাহাজে আটকে পড়া জীবিত ২৮ জনের একজন এই রাজীবের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরীর কাচিঝুলি এলাকায়।
দীর্ঘ সময় পরপর মোবাইল ফোন অন করে মেসেঞ্জারে স্ত্রীকে সেখানকার আপডেট জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এই থার্ড অফিসার। তবে বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে আর কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই রাজীবের সঙ্গে।
এদিকে জীবিত ২৮ জনকে রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ইউক্রেনের একটি বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হলেও উৎকন্ঠা কাটছে না পরিবারের সদস্যদের। গতকাল শুক্রবার (০৪ মার্চ) দুপুরে নগরীর কাচিঝুলি এলাকায় রাজীবের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী সিলভিয়া জাহান আনন্দীর সঙ্গে। তিনি বলেন, খবরে বারবার শুনছি তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা যদি হয়ে থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা আশ্বস্ত হতে পারতাম যে তারা নিরাপদে আছেন। তবে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার স্বামী নিরাপদে আছেন। সিলভিয়া জাহান বলেন, এখন আমাদের একটাই দাবি- যারা আটকে আছেন তাদের সবাইকে ভালোই ভালোই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হোক।
রাজীবের মেজো ভাই আসাদুজ্জামান রুবেল বলেন, পরিবারের সবাই আসলে খুব উৎকণ্ঠায় আছে। বাবা- মা কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাসার সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি আমার ভাইসহ সবাই যেন দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরতে পারে।
বড় ভাই কামরুজ্জামান রাসেল বলেন, জাহাজ থেকে উদ্ধার হলেও তারা যে পর্যন্ত দেশে না ফিরবে সে পর্যন্ত আমাদের উৎকণ্ঠা কমবে না। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনসহ বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটাই আকুতি, আমার ছোট ভাইসহ যেসব নাবিক সেখানে রয়েছে তাদের অতি দ্রুত দেশে পাঠানো হোক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫মিনিটে ইউক্রেনের বন্দরে থাকা পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। জাহাজের বাকি ২৮ নাবিককে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।