গত তিন বছরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৯১ জন। দেশের ৫৬টি জেলায় এসব ঘটনা ঘটে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সিজিএস জানায়, এই ৫৯১ জনের মধ্যে ৮৬ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি এসব ঘটনায় জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। গতকাল শনিবার দনির্বিচার প্রাণনাশ? বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-‘ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ড. আলী রীয়াজ। সিজিএস জানায়, সাতটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যার ক্ষেত্রে ২৫৯টি হত্যাকা-ে পুলিশ এবং ১৬২টি হত্যাকা-ে র্যা ব জড়িত ছিল। আর বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে- ২৩৮ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৯১ ব্যক্তি। এর মধ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৯ জন মারা গেছেন। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যার ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশই ছিল বন্দুকযুদ্ধে। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৬টিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় এরকম ঘটনা ঘটেছে ৫৮ জনের সঙ্গে।
সিজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঘটনায় পুলিশ এবং ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ ঘটনায় র্যা ব জড়িত ছিল। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২১২ জন, র্যা বের সঙ্গে ১৬৫ জন, বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, ২০১৯ সালে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ৩০৬ জন। প্রতিবেদনে এই সংকট মোকাবিলায় স্বাধীন কমিশন গঠন করে গত এক দশক ধরে চলা এসব হত্যাকা-ের তদন্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-কে বৈধতা দেয়ার প্রবণতা বন্ধসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। ওয়েবিনিয়ারে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, বোঝাই যায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। শুধু নির্বাচনই নয়, বিভিন্ন উৎসবের সময়েও লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তারা পদক, পদোন্নতি পাচ্ছেন। সেজন্য তারা আরও বেশি এ কাজটা করেন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ওয়েবিনারে বলেন, এসব ঘটনায় র্যা বের প্রতি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার পর দু’জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে রাষ্ট্র ও সমাজ টিকে থাকলে এগুলোর বিচার করতেই হবে। সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।