দর্শক সমাগমে মুখর নাটোরের সুবর্ণজয়ন্তীর মেলায় ব্যতিক্রমী এবং অনন্য কৃষি বিভাগের প্যাভিলিয়ন। চারটি স্টলে পণ্যের পসরা সাজিয়ে উদ্যোক্তাদের সরব উপস্থিতি, মাঠের বিশাল এলাকা জুড়ে শস্য দানায় জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার, নাটোর জেলার মানচিত্র, সবজি আর ফল পিরামিড এবং কৃষি যন্ত্রের একাল ও সেকাল দর্শনে মুগ্ধ দর্শক। শহরের পুরনো স্টেডিয়ামে ১৭ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলার সাতটি উপজেলার মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রধান শস্যদানা দিয়ে। নাটোর সদর উপজেলার মানচিত্র আঁকা হয়েছে ভুট্টা দানা দিয়ে। পেঁয়াজ দিয়ে নলডাঙ্গা উপজেলা, ধান দিয়ে সিংড়া উপজেলা, রসুনে গুরুদাসপুর উপজেলা, বড়াইগ্রামে মুগডাল, লালপুরে বাদাম আর গম দিয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা। একপাশে মাথার উপরে শিম দিয়ে জাতীয় পতাকার জমিন আর লালবৃত্ত পাকা টমেটো দিয়ে। এর নীচে রসুন আর শুকনা মরিচ দিয়ে শহীদ মিনার। রকমারী সবজি আর ফল দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল পিরামিড। এর মাথার উপরে ৪৮ কেজির অতিকায় মিষ্টি কুমড়া!
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আধুনিক মাধ্যম হিসেবে একপাশে প্রদর্শিত হচ্ছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, হারভেস্টর, গার্ডেন টিলার, রিপারসহ এক ডজন যন্ত্রপাতি। অন্যপাশে লাঙল, জোয়াল, কোদাল, আঁচড়া, মুগুড়, ঢেঁকিসহ ৬২ রকমের পুরনো যন্ত্র। নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারাজী সিদরাতুল মুনতাহার ভাষায়,‘মেলায় না আসলে এসব পুরনো কৃষি যন্ত্রপাতি একসাথে কখনো দেখা হতো না। এ তো রীতিমত এক যাদুঘর!’
প্রদর্শিত হচ্ছে নেট হাউজে বিষমুক্ত সবজি চাষ প্রযুক্তি, মাঞ্চিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ আর বসতবাড়ির সবজি চাষ। হর্টিকালচার সেন্টার ব্যতিক্রমী পেপিনোলেমনসহ বিভিন্ন ফলবৃক্ষের সাথে দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। কৃষি উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুলের ঘানিভাঙা সরিষার তেল, ঢেঁকিছাটা চাল, ব্লাক রাইস বিক্রি হচ্ছে হরদম। অপর উদ্যোক্তা মাসুদের মাশরুম আর ক্ষিতিশ বিশ্বাসের বিভিন্ন ফুলের চাষকৃত মধুর বিক্রিও অনেক। জয়নালের ওষুধী বৃক্ষের স্টলেও দর্শকদের আগ্রহ।
কৃষি উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের প্যাভিলিয়নে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের পসরা ক্রেতাদের মাঝে চাহিদা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে।
কৃষি প্যাভিলিয়নের পরিকল্পনাকারী নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। মেলার সকল দর্শক আগ্রহ নিয়ে কৃষি প্যাভিলিয়ন দেখছেন এবং কৃষির সাথে তাদের পরিচিতি ঘটছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বললেন, দর্শক সমাগমে মুখর মেলার মধ্যে কৃষি বিভাগের প্যাভিলিয়নটি সম্ভবত সবচে’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মেধাকে কাজে লাগিয়ে এ প্যাভিলিয়ন তৈরির জন্যে কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।