মিরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান জাহিদুল আজিজ নাহিদ। পড়ালেখা শেষ করে ব্যবসায় করে আসছেন তিনি। ব্যবসায়ের পাশাপাশি কৃষির প্রতি তার একটা ঝোঁক ছিল। ছোট থেকে বিভিন্ন ফসলের চাষ করত বাড়ির আঙিনায়। গতবছর মিরসরাইতে সর্বপ্রথম সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছিলেন তিনি। গতবছর স্বল্প পরিসরে সূর্যমুখী আবাদ করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন উপজেলাতে। উপজেলার বাহির থেকেও? বাগান দেখতে এসেছেন অনেক পর্যটক। এই বছর তিনি গ্রামের প্রায় এক একরের বেশি জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেন। বসন্ত বাতাসে গ্রামেও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। সূর্য যে দিকে হেলে পড়ছে, তার সঙ্গে বাতাসে দোল দিয়ে হেলে পড়ছে সূর্যমুখীও। এ দৃশ্য দেখার জন্য মিরসরাই উপজেলার এই গ্রামে প্রতিদিনই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানান বয়সের দর্শনার্থী।এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরূপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের খেত দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। এলাকাবাসী জানান, এ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছিল গতবছর। এই বছর আরো বড় পরিসরে বাগান করেন কৃষক জাহিদুল আজিজ নাহিদ। তাই সূর্যমুখী ফুলের হাসি দেখতে সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা দলে দলে ছুটে আসছেন এখানে। বিশেষ করে বিকেলে এখানে মেলার মতো হয়। বর্তমানে সূর্যমুখী বাগান বলে পরিচিতি লাভ করেছে স্থানটি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি একর জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। কৃষক জাহিদুল আজিজ নাহিদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি বিনামূল্যে কিছু সূর্যমুখী বীজ ও সার সংগ্রহ করেন। উন্নত জাতের হাইসান বীজ রোপণ করি। কৃষি অফিসারের পরামর্শে ১ একর জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করি। জানুয়ারির শুরুতে বীজ বপন করি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করি ভালো আয় হবে। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা খরচ হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বলে জানান তিনি। মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, কৃষক নাহিদ উপজেলায় সর্বপ্রথম সূর্যমুখী চাষ করেন।? তিনি উপজেলার সূর্যমুখী ফুলের বাগানের পথিকৃৎ। কৃষি প্রণোদনার আওতায় অনেক কৃষককে এই বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করি। তার দেখাদেখি আরো প্রায় ৪-৫ টি সূর্যমুখী ফুলের বাগান হয়েছে এই বছর। বর্তমানে যে তেলের সঙ্কট তা পূরণে ভূমিকা রাখবে সূর্যমুখী চাষ। মিরসরাইয়ের আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী।