বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

শেষ মুহূর্তে ইমরান খানকে সসম্মানে রক্ষা করলেন যিনি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে বহুবার শেষ মুহূর্তে সরফরাজ নওয়াজ, জাভেদ মিয়াঁদাদ বা ওয়াসিম আকরামকে দিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়েছেন। নিশ্চিত হারা ম্যাচ, হাসতে হাসতে জিতে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। রোববার রাজনীতির ময়দানেও কি তেমনই কিছু করে দেখালেন ক্যাপ্টেন? নাকি আরো বড় কোনো বিপাকে পড়তে চলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান? ভবিষ্যৎ যে দিকেই বাঁক নিক না কেন, রোববার সবার মুখে মুখে ঘুরছে আর একটা নাম। তিনি কাসিম খান সুরি। পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার, তথা ইমরানের অন্ধ ভক্ত, তথা অন্যতম বিশ্বস্ত সহচর। মহানাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে, এই সুরিই পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বাতিল করে দেন ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব। অঙ্কের বিচারে যে ‘ম্যাচে’ ইমরানের হার নিশ্চিত ছিল। এ সবের মধ্যেই পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ইমরানেরই প্রস্তাব মেনে অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়েছেন। ঘটনার গতিপ্রকৃতি যে দিকে, তাতে ফের বড় কোনো নাটক না ঘটে গেলে, তিন মাস সম্ভবত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালাবেন সেই ইমরানই। ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে ভোট দেবে পাকিস্তান। বেছে নেয়া হবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
রোববার ইসলামাবাদে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থাভোট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল স্পিকার আসাদ কায়সারের। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগেই তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন বিরোধীরা। আবেদনপত্র জমা পড়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সচিবালয়ে। শেষমেশ স্পিকারের আসনে বসে অনাস্থাভোট করানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে ডেপুটি স্পিকার সুরির ওপর। সুরি স্পিকারের চেয়ারে বসেই বললেন, ‘আমি, ডেপুটি স্পিকার হিসেবে রুলিং দিচ্ছি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করা হলো।’ তার পরই তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাসেম্বলি মুলতুবি করে দেন। কারণ হিসেবে সুরি বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব অসাংবিধানিক। এটি সংবিধানের পাঁচ নম্বর ধারার পরিপন্থী।
মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ বিরোধীদের। সরকার পতনের দৃশ্য দেখবেন বলে যে বিরোধীরা দল বেঁধে হাজির হয়েছিলেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে, তৈরি হচ্ছিলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার জন্য, সেই তাদেরই এখন ছুটতে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের দরজায়। চূড়ান্ত দিশেহারা অবস্থা। বিরোধীদের অভিযোগ, নাটের গুরু ইমরানই সুরিকে দিয়ে এই খেলা খেললেন। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েট্টা। পাকিস্তানের দশম বৃহত্তম এই শহরে ১৯৬৯-এ একটি পাশতুন পরিবারে জন্ম কাসিম সুরির। পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা। সুরির পড়াশোনা শুরু কোয়েট্টা ইসলামিয়া স্কুলে। তার পর ফেডারেল গভর্নমেন্ট কলেজ। ইমরান যে বছর দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেন, সেই ১৯৯২-এ বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতকোত্তর করেন সুরি। ওই সময় থেকেই ইমরানের ভক্ত। ১৯৯৬-এ যোগ দেন ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এ। শুরুতে একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করতেন। ২০১৩-য় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিটিআই প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার ভোটে লড়েন সুরি। কিন্তু কোয়েট্টার একটি আসন থেকে হেরে যান। ২০১৮-য় ফের কোয়েট্টার অন্য একটি আসন থেকে পিটিআইয়ের প্রতীকে লড়েন। এবার জয়ের স্বাদ পান। ১৩ অগাস্ট, তাকে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার করে পিটিআই। তার পর থেকে ওই দায়িত্বই পালন করে যাচ্ছেন একদা ইমরানের অধিনায়কত্বের অন্ধ ভক্ত, বর্তমানে খান সাহেবের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী সুরি। তিন দশক আগে, বিশ্বকাপ জেতার পর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ইমরান নিয়ম করে বলতেন, অধিনায়ক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় কাজ হলো, কে আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, দলের মধ্যে তাকে চিহ্নিত করে ফেলা। ইমরানের দাবি ছিল, সেই ‘সঠিক লোক’ই তাকে একের পর এক ‘হার্ডল’ পার করিয়েছে অবলীলায়। দীর্ঘদিন পাকিস্তানের রাজনীতিকে কাছ থেকে দেখছেন, এমন মানুষের একটি অংশ যদিও একটি সমাপতন এড়িয়ে যেতে পারছেন না। ১৯৯২-এর মেলবোর্নের সাথে ২০২২-এর ইসলামাবাদের। সে বার ইমরানের চোখে ‘সঠিক লোক’, লাহোরের ওয়াসিমের দাপটে ধরাশায়ী হয়েছিল ইংল্যান্ড। প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়েছিল পাকিস্তান। ঠিক ৩০ বছর পর, ইমরানের এ বারের ‘সঠিক লোক’ কোয়েট্টার সুরির চালে ধরাশায়ী বিরোধীরা। আপাতত মান বাঁচল ক্যাপ্টেনের। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com