বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

শিল্পে গ্যাস রেশনিংয়ে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশংকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলায় দৈনিক ৪ ঘণ্টা গ্যাস ব্যবহার বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে পেট্রোবাংলা। ১৫ দিনের জন্য নেয়া উদ্যোগটি নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন বস্ত্র ও পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নির্ধারিত সময়ে কারখানায় গ্যাস ব্যবহার বন্ধও রেখেছেন তারা। আবার শিল্পটিতে বড় ধরনের অভিঘাতেরও আশঙ্কা করছেন। তাদের দাবি, গ্যাস রেশনিংয়ের ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন তারা। গোটা সরবরাহ ব্যবস্থায়ই এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। গোটা বিশ্ব এখন কভিডের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এর ধারাবাহিকতায় পোশাকের ক্রয়াদেশও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নতুন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমতে যাচ্ছে অন্তত ৩০ শতাংশ। উৎপাদন কমলে রফতানিকারকদের পক্ষে সঠিক সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ সম্ভব হবে না। বিলম্বিত ক্রয়াদেশ পাঠাতে হতে পারে ব্যয়বহুল আকাশপথে। এছাড়া প্রতি বছরই ঈদ সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন পরিকল্পনা ও কার্যাদেশ চলমান থাকে কারখানায়। কিন্তু সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে শিল্পের অর্থপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যার ধারাবাহিকতায় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কাও রয়েছে। এর আগে ১১ এপ্রিল সিদ্ধান্তটি ঘোষণার আগে ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অব্যাহত উন্নয়নের ফলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুষম উন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে এ চাহিদা মোকাবেলা করা এখন সময়ের দাবি। তিনি আরো বলেন, রমজানের এ সময়ে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ে। তাই আগামী ১৫ দিন এ সময়টুকু সব শিল্পশ্রেণীর গ্রাহকরা গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখতে পারলে ভালো হয়।
অবাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, রেশনিংয়ের ফলে উৎপাদন ৩০ শতাংশের মতো কমে যাবে। বিশেষ করে বস্ত্র খাতের ডায়িং প্রসেসিং শিল্পগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ হবে। আর ৪ ঘণ্টা বলা হলেও মেশিন বন্ধ ও চালু করার সময় বিবেচনায় নিয়ে গড়ে ৮ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে ১৫ দিনে উৎপাদন বন্ধ থাকবে ১২০ ঘণ্টা।
গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বস্ত্র ও পোশাক শিল্প মালিকরা এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি নিয়ে বস্ত্র খাতের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পর্যায়ে সাক্ষাৎ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পোশাক শিল্প মালিক প্রতিনিধি সংগঠনগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর প্রতিনিধিরা এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের প্রত্যাশায় রয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, শিল্পের স্বার্থে গ্যাস ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন। বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম এ বিষয়ে বলেন, দেশে একটি অর্থবছরে মোট ব্যবহূত গ্যাসের সাড়ে ১৫ শতাংশ হয় শিল্প-কারখানায়। এর মধ্যে ৬-৭ শতাংশ ব্যবহার হয় পোশাক শিল্পের কারখানায়। পোশাক শিল্পের অবদান ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ব্যাকওয়ার্ড-ফরওয়ার্ড লিংকেজ মিলিয়ে শিল্পটিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে প্রায় এক কোটি মানুষ। পরোক্ষভাবে জড়িত পাঁচ কোটি মানুষ। এ শিল্পে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে কেন? এ প্রেক্ষাপটে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গ্যাস ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্তটি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করা করব।
বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বিষয়টি তাদের ওপর এক প্রকার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখা না হলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু সরবরাহ অব্যাহত থাকা অবস্থায়ই গ্যাসের চাপ পর্যাপ্ত ছিল না। এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখার চেয়ে ৪ ঘণ্টা ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সম্মত হওয়া ছাড়া কোনো উপায়ও তাদের হাতে ছিল না। নিট পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ বিষয়ে বলেন, দৈনিক উৎপাদন কমবে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ। সরকারের বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ৪ ঘণ্টার। কিন্তু বিষয়টি ৪ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ডায়িং কারখানায় যে কাপড় মেশিনে তোলা হয়, তাতে ২৪ ঘণ্টাকে তিন ভাগে ভাগ করে তোলা হয়। যেকোনো একটি ব্যাচ কাপড়ের ডায়িং প্রক্রিয়ায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ৪ ঘণ্টা বন্ধের সিদ্ধান্তে একটি ব্যাচ মেশিনে ওঠানোই সম্ভব হবে না। এ হিসেবে ন্যূনতম ৮ ঘণ্টার উৎপাদন লস হবে।
তিনি আরো বলেন, কারখানাগুলোর পক্ষে নির্ধারিত সময়সূচি মেনে পণ্য জাহাজীকরণ সম্ভব হবে না। ক্রেতা বলবে পণ্য আকাশপথে পাঠাতে। ব্যয়বহুল পণ্য পরিবহনে আর্থিক ক্ষতি হবে। আবার ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত উৎপাদন করে শ্রমিকরা বোনাস পান। এবার তা হচ্ছে না। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির একটা আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের রফতানি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে নিটওয়্যার খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে রয়েছে। স্পিনিং মিল সুতা দিতে পারবে না। ডায়িং থেকে কাপড় বের হবে না। দৈনিক আর্থিক ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকার কম হবে না।
সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) জেনারেল সেক্রেটারি ইরফান উদ্দিন বলেন, সিদ্ধান্তের আওতায় গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার মতো কোনো অবস্থা সিরামিক শিল্পে নেই। উৎপাদনের জন্য ফার্নেসের তাপমাত্রা ১ হাজার ৩০০ ডিগ্রিতে নেয়ার জন্য আমাদের সময় লাগে চার-পাঁচদিন। আবার ১ হাজার ৩০০ থেকে শূন্য ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে সময় লাগে তিনদিন। ফলে গ্যাস ব্যবহার দিনে ৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা সিরামিক শিল্পে সম্ভব নয়। সম্ভব করতে হলে ১৫ দিন গোটা সিরামিক খাতকে বন্ধ রাখতে হবে। বিষয়গুলো বৈঠকে বলা হলে সিরামিক খাতের জন্য সিদ্ধান্ত বিবেচনার বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এদিকে সব ধরনের শিল্প খাতে দৈনিক ৪ ঘণ্টা গ্যাস ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছে পেট্রোবাংলা। সিরামিক, ভোজ্যতেলসহ খাদ্যপণ্য শিল্পকে এ উদ্যোগের বাইরে রাখার কথা ভাবছে সংস্থাটি। শিগগিরই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। সিরামিক শিল্প মালিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ১১ এপ্রিল দুপুরের পর বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বৈঠকে সিরামিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী কয়েকটি শিল্পকে এ সিদ্ধান্তের বাইরে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা-সুজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনন্দিন চাহিদা অনেক বেশি। এসব বিষয় মাথায় রেখেই খাদ্যপণ্যসংশ্লিষ্ট শিল্পকে সিদ্ধান্তের বাইরে রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com