সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন

কেমন হবে এবারের ঈদযাত্রা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

করোনার ভয়াবহতায় গত দুই বছর ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল কিছুটা কম। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ঘরমুখী মানুষের জন্য নেই সুখবর। সড়ক কিংবা আকাশ, রেল কিংবা লঞ্চ সব জায়গায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা। ঢাকা থেকে বেরোনোর পথগুলোয় এখনই শুরু হয়েছে যানজট। সামনের দিনে এটা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এবার ট্রেনে ৫ গুণের বেশি যাত্রী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলানোই এবার ট্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
যারা আকাশ পথে বাড়ি ফিরতে চান তাদের সেই ইচ্ছাও পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ইতোমধ্যে দেশের সব রুটের এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট হাওয়া। এতসব ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। আগামী সপ্তাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়ার পর পরই তারা ছুটবেন বাড়ি।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি নিয়েই রওয়ানা হতে হবে। রাজধানীর গাবতলী-নবীনগর-ধামরাই, এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া-বাইপাইল, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও চলছে উন্নয়ন কাজ। এছাড়া সড়কের ফুটপাতসহ অনেক জায়গা দখল করে আছে হকার। অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশাসহ ছোট যান। এসব কারণে রাজধানী থেকে বের হওয়ার দূরপাল্লার গাড়ি বার বার থমকে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে গাড়ির গতি আরও কমে যাবে। তীব্র যানজটের সঙ্গে তীব্র ধুলা ও গরমে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। যানজটের ভোগান্তির সঙ্গে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। শুক্রবার থেকে দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যে টিকিট পাওয়া নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে এসব মহাসড়কেও যানজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেন, এবারের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সংস্কার কাজও চলছে।
স¤প্রতি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ ও বর্ষা সামনে রেখে মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে যাতে যানজট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এদিকে ঈদ সামনে রেখে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন শুক্রবার টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ কম ছিল। এদিন ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা বেশি । টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থাকায় গত দুই বছর ওই অর্থে ঈদ আনন্দ ছিল না। এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় গ্রামে গিয়ে ঈদ উদ্যাপনের আনন্দ ফিরে এসেছে। এ কারণে এবার ঈদযাত্রায় গত দুই বছরের তুলনায় মানুষের চাপ বেশি থাকবে বলেও মনে করেন তারা।
ঈদযাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও একতা পরিবহণের মালিক মো. আবুল কালাম বলেন, সড়কের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা ভালো। তবুও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শঙ্কা আছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী কলেজ গেট পর্যন্ত রাস্তায় থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে আশুলিয়া বাইপাইল পর্যন্ত সড়কের যেন বাপ-মা নেই। গত কয়েক বছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থা। পিচ ঢালাই রাস্তায় বড় গর্ত হলে ইট দিয়ে মেরামত করা হয়। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে গাড়ি চালানোই দায়। এসব কারণে এখন মাঝেমধ্যে যানজট হচ্ছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে ৭-৭.৩০ ঘণ্টা সময় লাগছে। রাস্তা ভালো হলে ৫-৫.৩০ ঘণ্টা লাগত। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রায় রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হতে সময় বেশি লাগছে। সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় সড়কে উন্নয়নকাজ, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে। ওইসব জায়গায় গাড়ি থেমে থেমে চলে। কখনো কখনো হালকা যানজট হচ্ছে, যা এখনো সহনীয়। তবে গাড়ির চাপ বাড়লে কী হয় সেটা দেখার বিষয়। বুধবার সরেজমিন গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, আমিনবাজার থেকে ধামরাই পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করা এবং ডিভাইডার বসানোর কাজ চলছে। এতে কোথাও কোথাও সড়ক সরু হয়ে গেছে। গাবতলী থেকে নবীনগর পর্যন্ত মূল চারলেন মহাসড়ক ভালো রয়েছে। তবে পাশের সার্ভিস লেনের কাজ চলছে। যেসব স্থানে সার্ভিস লেনের কাজ চলছে সেখানে ওই চার লেন দিয়েই সব ধরনের গাড়ি চলছে। নবীনগর থেকে ধামরাই পর্যন্ত পুরোটা সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে। ওই সড়কে মাত্র আসা-যাওয়ায় দুই লেনে গাড়ি চলছে। সার্ভিস লেনে ইট-বালুর মিশ্রণে ভরাটের কাজ চলছে। এ কারণে দুই লেনের পাশে দুই থেকে তিন ফুটের গভীরতা রয়েছে। ওই সড়কে গাড়ি চলে ধীরগতিতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কখনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা গাড়ি বিকল হলেই সড়কে যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা ছুটি হলেও যানজট দেখা দেয়। এ মহাসড়কে দক্ষিণাঞ্চলের গাড়ি চলাচল করে। পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মাওয়ার শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ফেরি পারাপারে বাস নেওয়া হচ্ছে না। আগে যেসব গাড়ি এ রুটে চলত সেগুলো এখন পাটুরিয়া ঘুরে যাতায়াত করছে। এতেও ভোগান্তি বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
আশুলিয়া থেকে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কে যানজট নিত্যদিনের চিত্র। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার বিকাল গড়াতেই আশুলিয়া সেতুর দুই পাশে অন্তত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। সেতু সরু হওয়ায় এর দুই পাশে শত শত গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে।
মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দ্রুতগামী বাসের চালক মো. আসলাম হোসেনের সঙ্গে কথা হয় জিরাবো বাস স্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট থেকেই থেমে থেমে যানজটে পড়তে হয়েছে। আশুলিয়া সেতুতে কে আগে পার হবে-ওই প্রতিযোগিতায় ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট হয়। এ ছাড়া আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত পুরো সড়কই ভাঙাচোরা ও এবড়োখেবড়ো। এ কারণে সড়কে ছোট গাড়ি ধীরগতিতে চলে। ওয়ানওয়ে হওয়ায় বড় গাড়ি ওভারটেক করতে পারে না। গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। গাবতলী থেকে জিরাবো আসতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তিনি বলেন, এখনই এই অবস্থা। ঈদে গাড়ির চাপ বাড়লে এ সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করবে। এ মহাসড়কে উত্তরাঞ্চলের অনেক বাস চলাচল করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী ও গাজীপুর পর্যন্ত রাস্তা ভাঙা। টঙ্গী ব্রিজের দুই পাশেই প্রায় যানজট লেগে থাকে। আর নবীনগর থেকে ইপিজেড হয়ে চান্দুরা পর্যন্ত মহাসড়ক ভালো হলেও রিকশা ও ভ্যানের আধিক্য ও মহাসড়কের পাশে হাটবাজার বসার কারণে গাড়ি ধীরগতিতে চলছে। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় বেশি লাগছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের জন্য আশুলিয়া থেকে বাইপাইল সড়ক সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই এ সড়কটি দেখভাল করছেন। এছাড়া এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের আওতায় থাকায় সেটিও তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ কারণে সড়কটিতে সংস্কার কাজ করছেন তারা।
২৮
বঙ্গোপসাগরে জাহাজডুবি, ১১ ক্রু নিখোঁজ
নোয়াখালীর ভাসানচর উপকূলে বঙ্গোপসাগরে কয়লাবোঝাই সজল তন্ময়-২ নামে একটি লাইটার জাহাজ ডুবে গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন জাহাজটির ১১ জন ক্রু। শনিবার (১৬ এপ্রিল) ভোরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টায় ভাসানচর কোস্টগার্ডের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল মোমিন জানান, ‘ভাসানচর থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল দূরে গাঙ্গুয়ার চর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে সাঙ্গুর কাছাকাছি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। এটা নোয়াখালীর হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকার মধ্যে পড়ে। ‘তিনি আরও জানান, ‘সকাল সাড়ে ৯টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযানে রয়েছি। নিখোঁজদের উদ্ধারে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ কাজ শুরু করেছে। এছাড়া কোস্টগার্ডের একটি জাহাজও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বাতাসের তীব্রতা থাকায় অতিরিক্ত রুলিংয়ের কারণে উদ্ধার কাজে বিঘœ ঘটছে।’ প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভোরের দিকে জাহাজটি ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। ডুবে যাওয়া জাহাজেরও সন্ধান মেলেনি বলে জানান আব্দুল মোমিন। এদিকে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজ ও ক্রুদের উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com