পবিত্র রমজান মাসজুড়েই ইফতারে সবাই বাহারি খাবার রাখেন। তার মধ্যে সব খারাই কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। অনেক সময় দেখা যায় খারাপ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভালো খাবারের পুষ্টিগুণ আপনার শরীর পায় না। সারাদিন রোজা রাখার পর অনেকেই মনে করেন, পেট ভরে যা ইচ্ছে তা-ই খাবেন। জানেন কি, সারাদিন না খেয়ে ফাস্টিং করার মাধ্যমে শরীরের অনেক উপকার হয়। তবে আপনি যখন রোজা ভেঙে ভুল খাবার খেয়ে ফেলবেন, তখন কিন্তু তা শরীরের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। রমজানে ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণেই বেশিরভাগ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাহলে রমজানে কোন কোন খাবার পাতে রাখবেন? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রমজানের সবচেয়ে ভালো ও খারাপ ৫ খাবার সম্পর্কে-
রমজানের সেরা ৫ খাবার: >> কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। যা তৃষ্ণা নিবারণ করে ও দীর্ঘ সময়ের জন্য হাইড্রেটেড রাখে। কলা ফাইবার ও প্রতিরোধী স্টার্চের একটি দুর্দান্ত উৎস। রোজা ভাঙার পর কলা খেলে এর প্রতিরোধী স্টার্চ আপনাকে পূর্ণতা অনুভব করতে সহায়তা করে। ফলে কম খাবার খেয়েও পেট ভরাতে পারবেন আপনি। এটি শরীরও পুষ্টি পাবে।
>> সারাদিন রোজা রাখার কারণে কার্বোহাইড্রেট ও মিষ্টির জন্য সবারই লোভ বেড়ে যায়। এজন্য ইফতারে রাখতে পারেন খেজুর। এটি একটি আদর্শ ডেজার্ট হতে পারে। খেজুরে প্রচুর অ্যানার্জি, ফাইবার ও আয়রন আছে।
খেজুরের প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় তা অল্প পরিমাণে খেলেও আপনি দ্রুত অ্যানার্জি পাবেন। ইফতারে দুটি খেজুর প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে ও আপনার মিষ্টি তৃষ্ণাকে মেটাতে যথেষ্ট হওয়া উচিত।
>> জোয়ার, বাজরা, ওটস ও রাগির মতো গোটা শস্য প্রোটিন সমৃদ্ধ। যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেট রাখে, ক্ষুধা নিবারণ করে ও শক্তি জোগায়। এগুলোতে প্রচুর জটিল কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকে। ফলে এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় ও শরীরও বেশি শক্তি পায়।
>> বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন- ওমেগা ৩ ও ৬ এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণতা বোধ করায়। এজন্য ইফতারে রাখতে পারেন শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুট। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
>> রোজা রাখার ফলে খালি পেটে অ্যাসিড তৈরি হওয়ার কারণে শরীর প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। সেই প্রভাব নিয়ন্ত্রণে ইফতারে টকদই বেছে নিন। এতে থাকে প্রোবায়োটিক। যা হজমে সহায়ক। ইফতারে আপনি টকদই ও বিভিন্ন ফল দিয়ে একটি সুস্বাদু ডেজার্ট তৈরি করতে পারেন।
দীর্ঘ বিরতির পরে ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের লোভ বাড়তে পারে। এজন্য ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা কমে।
রমজানের খারাপ ৫ খাবার: >> অনেকেই ইফতার বা সেহরিতে বিরিয়ানি খান। তবে এটা স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। বিরিয়ানি মিহি সাদা চাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে তেল ও খুব কম শাকসবজি থাকে। প্রয়োজনে বাদামি চাল ও শাক সবজি দিয়েও আপনি স্বাস্থ্যকর উপায়ে বিরয়ানি তৈরি করতে পারেন।
>> কৃত্রিম জুস ও শরবত সবারই এ সময় এড়ানো উচিত। কারণ এতে কৃত্রিম স্বাদ ও প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এর পরিবর্তে স্কিমড দুধ, তুলসি বা চিয়া বীজ দিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করুন।
গোলাপি রঙের জন্য বিটরুট যোগ করুন। চিয়া বীজ শরীরে পানি ধরে রাখে। ফলে শরীর হাইড্রেট থাকে। এই বীজে থাকে ফাইবার। এটি হজমে সাহায্য করে ও শক্তি জোগায়।
>> রমজানে ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন আয়োজনে পিৎজাসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড খান অনেকেই। জানেন কি, পিৎজা কার্বোহাইড্রেট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে পরিপূর্ণ। সারাদিন রোজা রাখার পর এগুলো শরীরের জন্য হজম করা কঠিন। ফলে শরীর তো পুষ্টি পাবেই না বরং বদহজম ও মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগবেন।
>> রোজা ভাঙতেই কমবেশি সবাই চিনির শরবত, বুন্দিয়া কিংবা জিলাপি ইত্যাদি খাবার খান। এসব মিষ্টি শরীরের জন্য আদর্শ নয়। বেশিরভাগ মিষ্টিতেই অতিরিক্ত ক্যালোরি থাকে। যা আপনাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করবে মুহূর্তেই।
>> অনেকের রোজা রাখার পরও অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় রমজান মাসে। এর কারণ হলো ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাওয়া। তাই কাবাব, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপসহ ডুবো তেলে ভাজা যে কোনো খাবারই পরিহার করুন। কাবাবের বদলে বেকড বা গ্রিলড ও চর্বিহীন মাংস খান। সূত্র: হেলদিফাইমি