সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

জাকাতের নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

রিয়াদ হোসেন
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা বা পরিশুদ্ধ করা। অর্থাৎ কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে তার নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়াকে জাকাত বলা হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে এটি পঞ্চম। জাকাত প্রতি বছর একবার করে দেয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসাবে আমাদের দেশে ঈদুল ফিতরের আগে যার ওপর জাকাত দেয়া ফরজ হয়েছে তিনি তার এলাকার গরিব, মিসকিন এবং আত্মীয়স্বজনদের মাঝে তার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ বিলিয়ে দিয়ে তার অবশিষ্ট সম্পদকে পরিশুদ্ধ করেন। কিন্তু আমাদের সমাজে কিছুটা সস্তা এবং নি¤œমানের কাপড় দিয়ে জাকাত দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে জাকাত হিসেবে আমাদের সমাজে লুঙ্গি এবং শাড়ির প্রচলনটা বেশি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ বাজারে গিয়ে জাকাতের পোশাক হিসেবে সব থেকে কম দামি লুঙ্গি এবং শাড়ি কিনে এনে জাকাত দিচ্ছেন। নিজেদের গচ্ছিত মালামাল পরিশুদ্ধ করতে গিয়ে গরিব অসহায় মানুষদের সাথে এক প্রকার প্রতারণা করছেন, যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
রমজান শুরু হতেই আমাদের স্থানীয় কিংবা বড় বড় বাজারের বিপণিকেন্দ্রে গেলে দেখা যাবে বড় বড় সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা আছে ‘এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায়’। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ কম দামে নি¤œমানের এসব কাপড় কিনছে। অনেকেই তো বাজারে গিয়ে নির্দিষ্ট করে সস্তা দামে জাকাত দেবে বলে প্রকাশ্যে কাপড় খুঁজছে। যা আস্তে আস্তে আমাদের সমাজে নৈতিকতার বড় অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। কারণ আল্লাহ তায়ালাা সূরা আল-ইমরানের ৯২ নং আয়াতে বলছেন, ‘কস্মিনকালেও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় না করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু মানুষের জাকাত দেয়া শুধু লোক দেখানো হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের এ ইবাদত পালন হচ্ছে না। বর্তমানে এই শ্রেণীর মানুষকে দেখে দেখে এ পক্ষে লোকের সংখ্যা বাড়ছে, যা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক।
জাকাত সম্পর্কে সূরা আল বাকারার ২৬৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা যে পবিত্র ধনসম্পদ উপার্জন করছ এবং জমি থেকে যে ফসল আমি তোমাদের দান করেছি- এ সব কিছু থেকে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করো।’ কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকের ওপর জাকাত ফরজ হলেও তারা তা বিভিন্ন অজুহাতে দিচ্ছে না। এর ফলে একদিকে যেমন গরিব অসহায়রা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে মহান আল্লাহ অখুশি হচ্ছেন। আর যারাইবা দিচ্ছেন তারাও এসব কর্মকা-ের ফলে জাকাতের নামে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছেন। অনেকেই তো জাকাত না দিলে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবে, কে কি বলবে এমন ভাবনায়ই দায়সারাভাবে জাকাত দিচ্ছেন।
প্রকৃতপক্ষে জাকাত ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে সে জাকাত না দিলে গোনাহগার হয়ে যাবে। এই জাকাতের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন ঘটবে। এ জন্য জাকাতে নি¤œ মানের কাপড় দিলে সমাজে বৈষম্য আরো বেড়ে যাবে। তাই আমাদের এসব চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খেয়াল রাখব, জাকাত হলো আল্লাহর একটি বিধান। কোনোভাবেই এটিকে প্রতারণা বা অহঙ্কারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। আর মনে রাখতে হবে, এই জাকাতের মধ্য দিয়েই নিজেদের মালামাল পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি আর্থিক ও নৈতিক সক্ষমতা অর্জন হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com