মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রির ভ্রাম্যমাণ গাড়ির সামনে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। আস্থার সঙ্গে কমদামে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পেরে খুশি ক্রেতারা। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, এটি সরকারের বেশ ভালো একটি উদ্যোগ। সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর ১৫টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এসব গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতিকেজি ২০০ টাকা এবং ডিমের হালি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, প্রথম রোজা থেকেই এসব পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উদ্বোধন করেছেন এ উদ্যোগের। চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত। ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সূত্র জানিয়েছে, শুরু থেকেই রাজধানীর আজিমপুর মাতৃসদন, নয়াবাজার, সচিবালয় সংলগ্ন আবদুল গণি রোড, সেগুনবাগিচা, খামারবাড়ি গোল চত্বর, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আরামবাগ, নতুনবাজার, কালশী, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, নাখালপাড়ার লুকাস মোড় ও উত্তরার দিয়াবাড়িসহ মোট ১৫টি স্থানে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে ভ্রাম্যমাণ গাড়ির সামনে গরুর মাংস কিনতে আসা পরিবহন শ্রমিক রুবেল জানিয়েছেন, ‘বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা। তার মধ্যে হাড্ডি-চর্বি তো আছেই। যে কারণে মাংস কিনে খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম। মা বাবাসহ সাত জনের সংসার। দুই কেজি গরুর মাংস তো লাগেই। এমন অবস্থায় সরকারের এ উদ্যোগ আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’ তিনি জানান, ‘মাংসের কোয়ালিটি ভালো। এখানকার ব্রয়লার মুরগির মাংসও দামে কম ও মানে ভালো।’
রাজধানীর বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত এম এ সোয়েব জানিয়েছেন, ‘টিসিবির পণ্য কিনতে থাকে দীর্ঘ লাইন। অনেকে আবার ট্রাকের পেছনে দৌড়াতে থাকেন পণ্য পাওয়ার আশায়। এমন পরিস্থিতিতে রমজানের প্রথম দিন থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুলভে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রির উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এখানে দুই কেজি গরুর মাংস কিনলে কমপক্ষে ৩০০ টাকা বাঁচে।’ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ এসব গাড়িতে এক হাজার কেজি গরুর মাংস, ৮৫ কেজি খাসির মাংস, ৭০০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, তিন হাজার লিটার গরুর দুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। শুরুতে প্রথম দিন ১০ হাজার পিস ডিম বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হলেও শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ২৮ হাজার পিস ডিম দেওয়া হয়েছিল। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৩২৫ টাকায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৫০ পিস ডিম, এক কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার ২৫০ টাকায় ২২ হাজার ২৭৫ কেজি গরুর মাংস, ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকার ১ হাজার ৬০৬ কেজি খাসির মাংস, ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ২০০ টাকায় ১২ হাজার ২৪৬ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, ও ৩১ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় ৫২ হাজার ৬০০ লিটার গরুর দুধ বিক্রি হয়েছে। শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা যায়, গাড়ির সামনে লম্বা লাইন। কোনও গাড়িতে বেলা ১২টা নাগাদই পণ্য বিক্রি শেষ। বিকাল পর্যন্ত বিক্রির কথা থাকলেও মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘রমজানে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের লক্ষ্য। চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনা করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়ের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনাও আমাদের আছে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ বিপণনে ব্যবহৃত পরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। কারণ মানুষকে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনোভাবেই যাতে ভেজাল না আসে, যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ, অস্বাস্থ্যকর বা জীবাণুযুক্ত না হয়, সে বিষয়টিতে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। মন্ত্রী আরও জানান, ‘গত বছর রমজান মাসে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও ডেইরি ও পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সুলভে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থায় ৩৪ কোটি ৮৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৭ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৩১০ জন ভোক্তা এবং ৮১ হাজার ৩৭৭ জন খামারি সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।’