বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

আধুনিক যুগে তাফসিরশাস্ত্রে নারীদের অবদান

সাইফুল ইসলাম তাওহিদ:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

তাফসির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এটি সরাসরি কোরআনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামী জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় নারীর পদচারণ থাকলেও প্রাচীন যুগ থেকে এই শাস্ত্রে নারীদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। নি¤েœ আধুনিক যুগে তাফসিরশাস্ত্রে নারীদের অবদান তুলে ধরা হলো। তাফসিরশাস্ত্রের আধুনিক যুগ : ১৪ শ হিজরির সূচনা বা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ থেকে আধুনিক যুগ শুরু বোঝায়। মুহাম্মদ আবদুহুর হাত ধরেই এই যুগের সূচনা হয়েছিল। তিনিই তাফসিরশাস্ত্রে নবত্ব আনেন।
আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য : আধুনিক যুগের তাফসিরশাস্ত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তা হলো:
এক. বিষয়ভিত্তিক তাফসির : এই যুগে বহু তাফসিরবিদ নির্দিষ্ট সুরাকে কেন্দ্র করে তাফসির পেশ করেছেন। বা একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে ওই বিষয়সংশ্লিষ্ট সব আয়াত একত্র করে তাসফির করেছেন। দুই. মৌখিক তাফসির : এই যুগে বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি শো বা রেডিওতে তাফসির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিন. নারীদের অংশগ্রহণ : এই যুগে তাফসির জগতে নারীদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। তাঁদের অনেকে পূর্ণাঙ্গ কোরআনের তাফসির করেন, অনেকে সুরাবিশেষের তাসফির করেন। (জুুহুদুল মারআ আল মুআসিরা ফি তাফসিরিল কুরআনিল কারিম, পৃষ্ঠা ৯)
আধুনিক যুগের কয়েকজন মুফাসসির : আধুনিক যুগের কয়েকজন নারী মুফাসসির হলেন:
আয়েশা আবদুর রহমান : তিনি মিসরের দিময়াত শহরে ১৯১৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানা ছিলেন আল আজহারের শিক্ষক। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেন আয়েশা আবদুর রহমান। ১৯৫০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাফসিরশাস্ত্রে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। রচনা করেন বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ। বলা যায়, তিনি আধুনিক যুগের প্রথম সারির নারী তাফসিরবিদ ও ইসলামী নারী স্কলার। তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসিরগ্রন্থ হলো দুই খ-ের ‘আত তাফসিরুল বায়নি লিল কুরআনিল কারিম’। এটি ৩০তম পারার বিশেষ কিছু সুরার তাফসির। এ ছাড়া তাসফির ও কোরআনি সায়েন্স বিষয়ে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।
জয়নব বিনতে মুহাম্মদ গাজালি : ১৯১৮ সালে মিসরে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন আল আজহারের শিক্ষক। শৈশবেই তিনি তাঁর পিতাকে হারান। মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। তিনি তাফসির, ফিকহ, হাদিসসহ অন্যান্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন। তাফসরিশাস্ত্রে তাঁর বিশেষ পা-িত্য ছিল। এই শাস্ত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো দুই খ-ের ‘নাজরাতুন ফি কিতাবিল্লাহ’। প্রথম খ-ে সুরা ফাতিহা থেকে সুরা ইবরাহিম পর্যন্ত, দ্বিতীয় খ-ে সুরা হিজর থেকে সুরা নাস পর্যন্ত। তিনি এই তাফসির রচনাকালে জগদ্বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থের সহযোগিতা নিয়েছেন। জয়নব গাজালির এই গ্রন্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি শিক্ষা ও প্যারেন্টিং বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। (জুুহুদুল মারআ আল মুআসিরা ফি তাফসিরিল কুরআনিল কারিম, পৃষ্ঠা ১০)
ফাওকিয়া ইবরাহিম আশ শিরবিনি : তিনি মিসরের একজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার। আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি শায়খ শারাউয়ির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন মজলিসে তিনি নারীদের তাফসিরের দরস দিতেন। তিনি সহজ-সরলভাবে কোরআনের তাফসির করতেন। তাফসির জগতে তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো চার খ-ের ‘তাইসিরুত তাফসির’। প্রায় সাত বছর সময় ও শ্রম ব্যয় করে তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন।
ফাতেমা কারিমান : ১৯৪২ সালে মিসরের কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন ফাতেমা কারিমান। সাংবাদিকতার ওপর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেন। এর পাশাপাশি তিনি টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা হিসেবেও কাজ করেন। বিভিন্ন দাওয়াতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সুবাদে তৎকালীন মিসরের বড় বড় আলেমদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং দ্বিনের পথে ধাবিত হন। ‘আল-লুলু ওয়াল মারজান ফি তাফসিরিল কোরআন’ নামক তিন খ-ের একটি তাফসিরগ্রন্থ রচনা করেন তিনি।
সামরা কুরুন জাকমাগিল : ১৯৪৮ সালে মাল্টায় জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে তিনি দ্বিনি শিক্ষা লাভ করেন এবং দ্বিনি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি একটি টিভি শোতে কোরআনের তাফসির পেশ করতেন। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তাফসিরকে তিনি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর সময় শ্রম দিয়ে তিনি ১৩ খ-ের গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটির নাম দেওয়া হয় ‘তাফসিরুল কারি’। এই নাম দেওয়ার একটি প্রেক্ষাপট আছে। আন-নিদা পত্রিকার সম্পাদক মুহাম্মদ আল ফাতিহ একদা স্বপ্নে দেখেন তিনি সামরা কুরুনের একটি তাফসিরগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এই স্বপ্নটি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হলে তিনি গ্রন্থটির নাম দেন ‘তাফসিরুল কারি’ তথা পাঠকের তাফসির। এই গ্রন্থ রচনাকালে তিনি আধুনিক তাফসিরগ্রন্থের সহযোগিতা নেন। (জুুহুদুল মারআ আল মুআসিরা ফি তাফসিরিল কুরআনিল কারিম, পৃষ্ঠা ১৩)
কামেলা বিনতে মুহাম্মদ আল কাওয়ারি : কাতারের দাওহায় জন্মগ্রহণ করেন এই নারী তাফসিরবিদ। শৈশবেই কোরআনুল কারিম মুখস্থ করেন। তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন তিনি। লেখাপড়া করেন শরিয়া অনুষদে। তাসফির জগতে তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো ‘তাফসিরু গরিবিল কোরআন’। এই গ্রন্থে তিনি আল-কোরআনের জটিল ও কঠিন শব্দগুলোর ব্যাখ্যা করেন।
নায়েলা হাশেম হাসান সাবরি : ১৯৪৩ সালে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। এবং আল আজহারে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তাঁর পরিবার শিক্ষিত ও ধার্মিক পরিবার। তিনি শৈশব থেকেই কবিতা লিখতেন। তাঁর অসাধারণ কাব্যিক প্রতিভা ছিল। তাফসির জগতে তিনি ১১ খ-ের একটি বিশাল রচনা করেন, যার নাম ‘আল মুবসির লিনুনিল কোরআন’। তিনি মহিলাদের নিয়ে অনেক তাফসিরের অনুষ্ঠান করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com