বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

সীতাকুণ্ডে এতো বড় বিস্ফোরণের নেপথ্যে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

দেশে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে মূলত বন্দরের ওপর চাপ কমাতে সরকার দেশে বেসরকারি আইসিডি বা অফডকের অনুমোদন দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে বেসরকারিভাবে আইসিডি গড়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়, তার ৯০ শতাংশই পরিবহন করা হয় ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে। আর বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের মধ্যে গড়ে ২৩ শতাংশ খালাস হয় এসব ডিপো থেকে। আমদানি ও রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছাড়াও খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে বেসরকারি ডিপোগুলো। দেশের আমদানি-রফতানি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব বেসরকারি আইসিডির অপ্রতুল যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও অফডকের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন সময়েই অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। এবার এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সে অভিযোগ আরো গুরুতর হলো।
সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ডিপোর কয়েকটি কন্টেইনারে অত্যন্ত দাহ্য এই রাসায়নিকটি ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তারা বলছেন, একারণে সেখানে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে যাতে এতো বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম শহরের কাছে এই ডিপোতে শনিবার রাতে অগ্নিকা-ের সূচনা ঘটে। এতে অন্তত চারশ জন দগ্ধ হয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন কারো কারো শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন।
হাসপাতালগুলোতে আহত লোকজন উপচে পড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যেতে পারে। শুধু একটা বিস্ফোরণ ছিল না। কিছুক্ষণ পর পর থেকে থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। আগুন যখন একটা কন্টেইনার থেকে আরেকটা কন্টেইনারে গিয়ে লাগছিল তখন একটা একটা করে বিস্ফোরণ হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এই ডিপোটি প্রায় ২৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে কয়েক হাজার কন্টেইনার ছিল।এসব কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়াও আরো কিছু রাসায়নিক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও সেখানে রপ্তানির জন্য গার্মেন্টসের তৈরি পোশাকও ছিল। বাংলাদেশে কোনা একটি অগ্নিকা-ের ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে এই বাহিনীর এতো কর্মীর প্রাণহানি স্মরণ কালের মধ্যে কখনো ঘটেনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, সীতাকু-ের মতো শিল্প এলাকায় আগুন মোকাবেলার করার মতো প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্র-সামগ্রী দমকল বাহিনীর রয়েছে। কিন্তু এই ডিপোতে যে রাসায়নিক-ভর্তি কন্টেইনার ছিল দমকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের সেটা জানা ছিল না। দমকল কর্মীরা জানান, তারা যখন আগুন নেভাচ্ছিলেন তখন একর পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে এবং তাতে প্রাথমিক যে দলটি সম্মুখভাগে কাজ করছিলেন তারাই নিহত হয়েছেন। একজন দমকল কর্মী বলেন, “আমরা যদি জানতে পারতাম যে এখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক পদার্থ আছে তাহলে আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা তাদের সরঞ্জাম নিয়ে আগেই সেখানে যেতে পারতো।” ঘটনাস্থলে মালিক-পক্ষের কেউ ছিলেন না বলেও অভিযোগ দমকল বাহিনীর। একজন কর্মী বলেন, “তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি এবং খোঁজ করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। সেকারণে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।” পরিস্থিতি বোঝার পর বিপদজনক পদার্থ বিশেষজ্ঞরা রাজধানী ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছে। বিস্ফোরণে কারণে বাতাসে যে গ্যাস ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে তার কারণে স্থানীয় লোকজনের চোখ এবং ত্বকে জ্বালাপোড়া করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনাটি দুর্ঘটনা, না কি নাশকতা সেটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এতো বড় একটি ঘটনা ঘটেছে সেটি দুর্ঘটনা না কি নাশকতা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত রোববার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্র্যাবের নবনির্বাচিত কমিটির সাথে মতবিনিময় ও সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ঘটনা ঘটার পর তদন্তের কথা বলা হয়, আগে কেন মনিটরিং করা হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার আগে কীভাবে খতিয়ে দেখবে। ঘটনা ঘটার আগে খতিয়ে দেখার কোনো সুযোগ আছে কি? সুযোগ নেই। তাদের সমস্ত কম্প্লায়েন্স ছিল কি না সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। তারা সমস্ত কম্প্লায়েন্স করা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিল কি না সেটি খতিয়ে দেখা জবে। দাহ্য পদার্থ থাকলে উদ্বারকাজের সময় অন্যভাবে ফায়ার সার্ভিস কাজ করত, সেই বিষয়ে মালিকদের কম্প্লায়েন্স ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় বসে সেটি বলতে পারব না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটি খতিয়ে দেখছে। যদি তাদের কম্প্লায়েন্স না থাকে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ দায়ী হবে। আর কম্প্লায়েন্স থাকার পরও এটি ঘটলে সেটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সেটিও বেরিয়ে আসবে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। বিস্ফোরণের পর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার মানুষ কাঁপুনি টের পেয়েছে। ডিপো-সংলগ্ন এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে রাসায়নিকের ঝাঁঝালো গন্ধ। প্রাণহানি ও হতাহতের পাশাপাশি এ দুর্ঘটনা দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলেছে। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এতে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কনটেইনার ডিপোয় এত বড় দুর্ঘটনা আর ঘটেনি। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর ডিপো পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম বন্দরের সহযোগী হিসেবে প্রায় ২৪ বছর আগে কনটেইনার ডিপোর যাত্রা হয়। মূলত রফতানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার আগে এবং আমদানি হয়ে আসা পণ্য খালাস হওয়ার পর কনটেইনার রাখার জন্য ডিপো ব্যবহূত হয়। আমদানি-রফতানি পণ্য সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ডিপোগুলোর পরিচালন কার্যক্রম তদারক করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বিএম কনটেইনার ডিপোয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডবাহী ২৬টি কনটেইনার ছিল। ডিপোর টিনশেডেও প্লাস্টিকের জারে এ রাসায়নিক রাখা ছিল। আগুন লাগার পর কনটেইনারে থাকা রাসায়নিকভর্তি জার ফেটে যায়। এতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বের হয়ে কনটেইনারের সংস্পর্শে আসে। অক্সিজেন নির্গত হয়ে আগুনের সংস্পর্শে এসে জ্বলতে থাকে। এতে কনটেইনারের ভেতরে তাপমাত্রা বেড়ে বিস্ফোরণ ঘটে। কনটেইনার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে স্প্লিন্টারের মতো তা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) পক্ষ থেকে দেয়া হিসাব অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় এ ডিপোয় ৪ হাজার ৩০০ একক কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে ৮০০টি রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ও ৫০০টি আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ছিল। এর বাইরে অবশিষ্ট তিন হাজার কনটেইনার খালি ছিল। পণ্যভর্তি ও খালি সব মিলিয়ে ডিপোর ৯৫ শতাংশ কনটেইনারই ভস্মীভূত হয়েছে। বিকডার হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বিএম ডিপোর আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা সাড়ে ছয় হাজার একক।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, গত ২৪ বছরে এত বড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়নি কোনো ডিপো। আমরা বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা হিসাব করেছি। এর মধ্যে রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনারে ৭০০ কোটি টাকা, আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারে ৪০০ কোটি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া খালি কনটেইনারের ক্ষেত্রে এ ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা।
ডিপোয় রফতানি করার জন্য যে পণ্য রাখা ছিল তার সিংহভাগই পোশাক খাতের। পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও প্রাথমিকভাবে আর্থিক ক্ষতির একটি ধারণা মিলেছে। প্রাথমিক হিসাবে তারা বলছেন, ডিপোয় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় রফতানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোয় ১৮-২০টি শিল্প গ্রুপের পণ্যভর্তি কনটেইনার ছিল। আর্থিক ক্ষতি সঠিকভাবে নিরূপণে সময় লাগবে। তবে শুধু রফতানিকারকদের হিসাব ধরে প্রাথমিকভাবে এ ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বিএম কনটেইনার ডিপোয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজীকরণ হয়ে রফতানির অপেক্ষায় থাকা অন্তত ২০টি বড় শিল্প গ্রুপের পণ্য ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হা-মীম গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ, ফোর এইচ গ্রুপ, এশিয়ান গ্রুপ। প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বণিক বার্তাকে বলেন, ডিপোয় আমাদের রফতানির অপেক্ষায় থাকা ডেনিম পণ্য ছিল। এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজীকরণের কথা ছিল। ঠিক কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব বের করতে কিছুটা সময় লাগবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের এ ঘটনার সময় ডিপো কর্তৃপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেন, আমি সকালে যখন বিএম কনটেইনার ডিপো পরিদর্শনে যাই তখনো সেখানে অনেক জায়গায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণ হচ্ছিল। সেখানে তখন আমি ডিপো কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তাকে খুঁজে পাইনি। তারা যদি সহযোগিতা করত তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো কমানো যেত। এ ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে তাতে বিস্তারিত উঠে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার কেশবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিএম কনটেইনার ডিপোয় আমদানি-রফতানিতে ব্যবহূত কনটেইনারের পরিচালন ও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করা হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চালু হয়েছিল এ ডিপো। যৌথ বিনিয়োগের এ ডিপোয় অংশীদারি রয়েছে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের। বিএম কনটেইনার ডিপোর চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বার্ট প্রঙ্ক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন স্মার্ট গ্রুপের মোস্তাফিজুর রহমান। এর পরিচালক হলেন স্মার্ট জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান, যিনি মোস্তাফিজুরের ভাই। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদেও আছেন। পোশাক খাত ছাড়াও এলপিজি, খাদ্যপণ্য প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ রয়েছে স্মার্ট গ্রুপের। যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সেটিও স্মার্ট গ্রুপের আরেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের।
কাস্টমস সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা ও যন্ত্রপাতির শর্ত পূরণ না করার কারণে ২০১৭ সালে বিএম কনটেইনার ডিপোর লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে এখন বড় এ দুর্ঘটনার পর ডিপোটিতে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ খালাস ও মজুদে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপকসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগে থেকে জানানোও হয়নি যে সেখানে কনটেইনারভর্তি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, কনটেইনারগুলোয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল। উচ্চচাপে এ রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। তাছাড়া শুরুতে জানানোও হয়নি যে এখানে কেমিক্যালভর্তি কনটেইনার রয়েছে। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। আবার ডিপোটিতে পানির কোনো উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। পরে যখন রাসায়নিকের বিষয়টি জানা যায় তখন থেকে ফোমের মাধ্যমে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়।
এ দুর্ঘটনায় কনটেইনার ডিপো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের অবহেলা থাকতে পারে বলে মনে করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রাজধানীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিপো যারা পরিচালনা করেন তাদের বিরাট অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কী ধরনের পণ্য এখানে আসা-যাওয়া করে তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল। সেখানে যে বিপজ্জনক পণ্য ছিল সেটা তারা জানিয়েছিল কিনা তা দেখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের পদার্থ তারা বৈধ নাকি অবৈধভাবে মজুদ করেছে। যদি বৈধভাবে মজুদ করে তাহলে সেগুলোর জন্য আলাদা পদ্ধতি আছে, কিছু প্রস্তুতি থাকতে হয়। সেগুলো ছিল কিনা তা দেখতে হবে। এগুলো সবই তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, বিএম কনটেইনার স্মার্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com