প্রখর সূর্যটাও তো একটা সময় নিস্তেজ হয়ে যায়। রাতের আঁধারে নিজেকে হারিয়ে বেড়ায়। দিনের জ্বলজ্বলে আলোও তো একটা সময় আড়াল পরে যায়, লুকিয়ে যায় শেষ বিকেলের গোধূলি বেলায়। রাতের মায়াবি চাঁদও তো ভোরের শুভ্রতায় মলিন হয়ে যায়, তারকাগুলোও বলে দেয় বিদায়। সময়ের সাথে বদলে যাওয়া সৃষ্টির রহস্য। কিন্তু কেউ কেউ আছেন সেই রহস্যের ধারই ধারেন না। বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছুটে চলেন ভিন্ন পথে বীরের বেশে। অন্য সব উদাহরণ ছুড়ে ফেলে শুধু ক্রিকেটে ফিরলেও উদাহরণ নেহায়েত কম নয়। বয়স যাদের কাছে নিছকই এক সংখ্যা মাত্র। পুরনো গল্প বাদ দিলেও মালিক, হাফিজরা আছেন হালেও। তবে আরও একটা নাম আছে, ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়স যার; বল হাতে বিপজ্জনক আগ্রাসনে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, ম্যাকগ্রাদের কথা শুনেছি। ডেনিস লিলি, ম্যালকম মার্শালদের গল্প পড়েছি। সবুজ গালিচায় সাপের ন্যায় ফণা তুলা সুইংয়ে যারা সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখাতে কার্পণ্য দেখায়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের খেলা দেখার সৌভাগ্য কভুও হয়নি। আফসোস থেকেই যাবে। তবে সেই ক্ষতে খানিকটা প্রলেপ হয়েছে একজন জিমি অ্যান্ডারসনের হাতে!
১৯৮২-এর জুলাই ৩০-এ যখন মাইকেল অ্যান্ডারসন তার সদ্যোজাত ছেলেটার নাম জেমস অ্যান্ডারসন রেখেছিলেন তখনো কি তিনি জানতেন, খেলার দুনিয়ায় এই নামটি এসেছে একাধিকবার? এই নামে একজন স্কটিশ গলফার, আমেরিকান ফুটবলার, অস্ট্রেলিয়ান টেনিস প্লেয়ার, আমেরিকান বাস্কেট প্লেয়ার, একজন ব্রিটিশ প্যারা অলিম্পিক সুইমার এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির হয়ে দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা একজন ক্রিকেটার আছেন! না জানলেও সমস্যা নেই। কারণ তিনি যেই অ্যান্ডারসনকে জন্ম দিয়েছেন, তিনি শুধু নাম লেখাতে আসেননি। এসেছেন রাজত্ব করতে, ইতিহাস বদলে দিতে। আর প্রায় ৪০ বছর পর এসে সেই সব নামকে পেছনে ফেলে ক্রিকেটের জেমস অ্যান্ডারসন যেন এক রাজসিক চরিত্রের নাম! সব অ্যান্ডারসন থেকেও বিখ্যাত, অনেক বেশিই আলোচিত; তারকাখচিত।
শুরুটা ছিলো তার স্পিনে। তবে পছন্দের খেলা ছিল টেনিস। ভাগ্যিস, তবুও মনটা অবশেষে ক্রিকেটে ফিরেছিল। অন্যথায় এমন বৈচিত্র্যময় এক চরিত্র ক্রিকেট কোথায় পেত? ৪০ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের মতো এক পেশাদার দলের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা! শুধুই কি খেলা, রীতিমতো আগ্রাসী তার ভূমিকা। ভাবা যায়! অনেক পেসারদের জন্য যা শুধুই স্বপ্ন বা কল্পনা। খেলেছেন, তথা খেলছেন ১৭১তম টেস্ট ম্যাচ। বিশ্ব ক্রিকেটে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম স্থানে থাকা শচিন টেন্ডুলকার খেলেছেন ২০০ টেস্ট ম্যাচ। তবে পেসার হিসেবে সেরা দশ সর্বোচ্চ টেস্ট খেলা ক্রিকেটারের মাঝে একমাত্র পেসার তিনি। পেসারদের মাঝে সর্বোচ্চ উইকেটও তার; সংখ্যা ৬৫০! আর সব মিলিয়ে তৃতীয় স্থানে। ৮০০ ও ৭০৮ উইকেট নিয়ে মুরালিধরন ও ওয়ার্ন আছেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে। জানা নেই তিনি কত দূর গিয়ে থামবেন। তবে তিনি যেখানে থামবেন সেখানে হয়তো ইতিহাসও থমকে যাবে। তার পেছনে ছোটা সতীর্থ স্টুয়ার্ড ব্রড এখনো ১০৬ উইকেট পিছিয়ে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা টিম সাউদি তো এখনো ৩০৮ উইকেট দূরে!