গোতাবায়ার ভিসা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। একই সঙ্গে পশ্চিমা লীয় প্রদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। গত শনিবার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তবে তার আগেই নিরাপদে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই সময়ে পার্লামেন্টের স্পিকারের মাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি জানান, ১৩ জুলাই (বুধবার) পদত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগের কথা রয়েছে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। বুধবার ভোর রাত তিনটায় তিনি মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি তিনি।
দুপুর পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রস্থল কলম্বোর গলে ফেস গ্রিন পার্কে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সেখান থেকে তারা ২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্ব ফ্লাউয়ার রোডে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেন। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের পর সর্বদলীয় অন্তবর্তী সরকার গঠনে সম্মতি আসলে তিনিও পদত্যাগ করবেন। তবে বিক্ষুব্ধ শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছেন।
তার কারণ শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩০ দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। এই অনুযায়ী রনিল বিক্রমাসিংহেরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা রয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের একজন বুদ্ধি করুনারতেœ বলেন, ‘সন্ধ্যার মধ্যে যদি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর খবর না পাই তাহলে আমাদের হয়তো আবারও সমবেত হয়ে পার্লামেন্ট ও অন্য সরকারি ভবনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। আমরা কঠোরভাবে গোটা-রনিল সরকারের বিরোধী। উভয়কেই সরে যেতে হবে’।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ভিসা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে সম্মত হওয়ার পর গোতাবায়া পালিয়ে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন- এমন গুঞ্জনের মধ্যে এ খবর প্রকাশিত হলো। গোতাবায়া দ্বৈত নাগরিক তথা একইসাথে শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। তিনি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। কিন্তু বর্তমানে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের জন্য তাকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। কলম্বোভিত্তিক এক শীর্ষ কর্মকর্তা মঙ্গলবার দি হিন্দুকে বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনার পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এ ব্যাপারে দি হিন্দুর পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়া হলেও মার্কিন দূতাবাস তাতে সাড়া দেয়নি। গোতাবায়া মঙ্গলবার দেশত্যাগ করার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। কিন্তু বিমানবন্দরের কর্মীরা তাকে বাধা দিলে তার চেষ্টা ভ-ুল হয়ে যায়। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা বলা হয়নি।
এদিকে রোববার শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চাং এক বিবৃতিতে ‘শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার হস্তান্তরে’ সকল পক্ষের সহযোগিতার আহ্বান জানান। একটি তার মাত্র এক মাস আগের অবস্থান থেকে পরিষ্কারভাবে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত। ওই সময় বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহকে নিয়োগ করাকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। তিনি তখন বলেছিলেন, রনিল বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ, দ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন হলো সঙ্কট সমাধান ও স্থিতিশীতা প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। আমরা আইএমএফের সাথে অর্থপূর্ণ অগ্রগতিকে উৎসাহিত করছি।’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানালো মালদ্বীপ: বিক্ষোভের মুখে প্রথমে প্রেসিডেন্ট প্যালেস থেকে অন্যত্র এরপর দেশ থেকে পলায়ন। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এ হেন অবস্থা চলছে কয়েকদিন ধরে। এবার তিনি দেশ ছেড়ে সস্ত্রীক মালদ্বীপে পালিয়েছেন। জানা গেছে, বুধবার (১৩ জুলাই) সকালে মালদ্বীপে পৌঁছান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। ভেলানা বিমানবন্দরে মালদ্বীপের সরকারি কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। শ্রীলঙ্কাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার গভীর রাতে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া। দেশটির এক কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, কলম্বো বিমানবন্দর থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে গোতাবায়া দেশ ছাড়েন। শ্রীলঙ্কার এক কর্মকর্তা এএফপি-কে জানিয়েছেন, আন্তোনভ-৩২ বিমানে এক দেহরক্ষীকে নিয়ে সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তাকে নিরাপদে দেশ ছাড়ার ব্যবস্থা করে দিলে তবেই তিনি পদত্যাগ করতে রাজি আছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা। তবে বিরোধীরা তার এই দাবি মানতে নারাজ। এর পরই মঙ্গলবার গভীর রাতে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া রাজাপাকসে। এর আগে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২৬ বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালের তামিল টাইগারদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। আর সেই গৃহযুদ্ধে বিজয় আসে প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের শাসনকালে। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচনে জয়ী হয় এই পরিবার। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শাসনভার পরিচালনার কারণে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।