তাকওয়া আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বেঁচে থাকা বা আত্মরক্ষা করা। ইসলামী পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় আল্লাহ তায়ালার ভয়ে সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা বা আত্মরক্ষা করা।
প্রতিটি মুমিনের জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন উন্নীত হতে পারে তার ঈমানের সর্বোচ্চ স্তরে। আবার তাকওয়ার অভাবে অমূল্য সম্পদ ঈমান হারিয়ে সে নিক্ষিপ্ত হতে পারে কুফরের অতল গহ্বরে। কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অবলম্বন তথা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার কথা বলেছেন। একটি আয়াতে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং প্রতিটি মানুষ যেন ভেবে দেখে সে আগামীকালের (আখিরাতের) জন্য কী পাঠিয়েছে? আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিঃসন্দেহে তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা হাশর, আয়াত-১৮) আরেকটি আয়াতে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০২) অন্য একটি আয়াতে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক বিষয়। (সূরা হাজ, আয়াত-১)
আরেক আয়াতে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে তিনি তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তাদের উভয় থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য নর-নারী। আর তোমরা ভয় করো আল্লাহকে যার অছিলা দিয়ে তোমরা প্রার্থনা করো এবং (ভয় করো) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। (সূরা নিসা, আয়াত-১)
কুরআনুল কারিমে ও হাদিস শরিফে তাকওয়া অর্জনের অনেক ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করেনি। (সূরা তলাক, আয়াত : ২-৩)
আরেক আয়াতে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার বিষয় সহজ করে দেবেন। (সূরা তলাক, আয়াত-৪)
এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন কাজটি মানুষকে অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বললেন, আল্লাহর ভয় এবং উত্তম চরিত্র। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস-২০০৪)
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে আমরা তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহকে ভয় করার গুরুত্ব ও ফজিলত জানতে পারলাম। আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজাও ফরজ করেছেন মূলত তাকওয়া অর্জনের জন্যই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) তাই শুধু রমজান মাসেই নয়, বরং বছরজুড়ে এবং আমাদের জীবনজুড়ে হোক তাকওয়ার অনুশীলন। লেখক : পরিচালক, আল-হাদী দারুল কুরআন মাদরাসা, বড়ভিটা, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম