প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। তবে আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ করলে হবে না। নজরদারিতে রাখতে হবে, যে আমরা কি আসলেই সাধু নাকি ভেতরে ভেতরে অসাধু। সেইটা যদি আপনারা নজর না রাখেন, তবে আপনাদের দায়িত্ব পালন হবে না। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) নির্বাচন ভবনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সঙ্গে সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ব্যালট পেপারে যে অসুবিধা, ব্যালটা ছিঁড়ে সিল মেরে দেয়। বাংলাদেশে যে নির্বাচনগুলো অতীতে হয়েছে, ৭৩ সালে নির্বাচন হয়েছে; এরপর সামরিক শাসনের সময় নির্বাচন হয়েছে। হা-না ভোট হয়েছে। কাগজের যে সমস্যাটা, আমি নিজেও বাক্স পুড়িয়ে দিতে পারি। ইভিএমে লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে ভেঙে ফেলতে পারবেন, কিন্তু ওখানে ভোট নষ্ট হবে না।
‘অর্থশক্তিকে কীভাবে সামাল দেবো, বুদ্ধি দেন। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে? কাগজে-কলমে পাঁচ লাখ টাকা করা হলেও যদি প্রকৃত খরচ পাঁচ কোটি হয় কীভাবে আপনাকে ধরবো; আপনি আমাকে কীভাবে ধরবেন। এটা সম্ভব। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, আমাদের চর্চাটা অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে। পয়সা ঢালতেছে। মাস্তান ভাড়া করতেছে। একজন প্রফেশনাল কিলারকে হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, আজকাল যেটা হয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মাঠে আপনাদের থাকতে হবে। তথ্য দিলে আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। এই প্রতিশ্রুতির কিছু মূল্য থাকা তো উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজী খেয়ে যাবো তাতো না। সেটা হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী হবে। সময়মত হবে। ভোটাররা যাবেন, ভোট দেবেন। আমরা আমাদের দায়িত্ব সর্বশক্তি দিয়ে পালন করার চেষ্টা করবো। আপনারাও কিছু দায়িত্ব নেবেন। অর্থ শক্তি, পেশি শক্তি মোকাবিলা ও ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বেশি দায়িত্ব নেবেন। আমরা শেয়ার করবো দায়িত্বটা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা কোনও কিছুতেই মাইন্ড করি না। আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন কঠোরভাবে। এটাও কিন্তু বলে রাখছি, আমাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে প্রকাশ করে দেবেন। আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করতে চাই না। কমিশনের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আস্থা পাওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই চেষ্টা করে যাবো। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখেন, দেখেন আমরা কতটুকু করতে পারি। ভুল হলে ধরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, পেপার-পত্রিকায় যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে আমরা কিছুই করছি না। মনে হচ্ছে, যে যাবে বৃন্দাবন, সেই হবে রাবণ। আপনারা যদি একটু ফিডব্যাক দেন তাহলে আমরা আরেকটু উজ্জীবিত হই। আমাদের কতটুকু ইতিবাচক, নেতিবাচক; তা যদি বলেন তাহলে আমরাও বলতে পারি যে জনগণের কাছে আমাদের কাজ পৌঁছে গেছে। নিজেদের কাজ নিজেদের কাছে বোঝা কঠিন। আমরা আস্থা অর্জনের চেষ্টাই করছি না, এই চিন্তা থেকে আপনারা একটু বেরিয়ে আসুন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রতিহত করার জন্য। একজন মা যদি ভিডিও কলে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তবে ইভিএম একটি মাত্র চাপ দিয়ে ভোট দিতে পারবেন না? ইভিএম মেশিন নিয়ে অবিশ্বাস থাকা উচিত না। সংলাপে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।