মাছ-মাংসের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের কিছুটা চাহিদা পূরণ করছিল ডিম। কয়েক দিন ধরে সেই ডিমের রেকর্ড দামে এসব মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে নি¤œমধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। আর ডজন ১৫৫ টাকা। ডিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সব ধরনের মুরগির দামও। ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০, সোনালি ৩০০ এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকা কেজি। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক মাস আগের ডিমের দামের তুলনায় বর্তমানে দাম ১৫.৩৮ শতাংশ বেশি। আর এক বছর আগের দামের তুলনায় ৩২.৩৫ শতাংশ বেশি। রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিনই বাড়ছে ডিমের দাম। শনিবার ছিল ১৫০ টাকা ডজন, আজ (গতকাল) পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫৫ টাকা। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক ডজনে পাঁচ টাকা করে বাড়ছে। মাছ ও মাংসের দাম বাড়ায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বাড়ছে। ’
ডিমের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, পোলট্রি খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। জ্বালানির দাম বাড়ায় পরিবহন খরচও বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে লোড শেডিংয়ের কারণে ঢাকার বাইরের খামারিরা মুরগি পালন বন্ধ করে দিতে শুরু করেছেন। কারণ ছোট ছোট খামারিরা জেনারেটরের খরচে কুলিয়ে উঠতে না পেরে উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পোলট্রি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘পোলট্রি খাদ্যের দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ টাকা হয়েছে, পিকআপভাড়া ছিল দুই হাজার ৪০০ টাকা, সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁঁচ হাজার টাকা। মূলত এসব কারণেই ডিমের দাম বাড়ছে। আবার শোড শেডিংয়ের কারণে খামারিরা মুরগি পালন বন্ধ করে দিতে শুরু করায় ডিমের ঘাটতিও তৈরি হয়েছে। ’
ডিমের সঙ্গে বাড়ছে মুরগির দামও। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, সোনালি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকা। পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়তি, সঙ্গে পরিবহন খরচ বাড়ায় এ দাম বাড়ছে। ’
কারওয়ান বাজার মোড়ে রিকশাচালক ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ডিম ছিল আমাদের একমাত্র আমিষের উৎস। এই ডিমের দামও এখন আকাশছোঁয়া। মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় অনেক আগেই এসব আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জহিরুল ইসলাম লিখন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণত মাসে আমার তিন কেস ডিম প্রয়োজন হয়। প্রতি কেসে ডিম থাকে ৩০ পিস। গত মাসে প্রতি কেস ডিম কিনেছি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর বর্তমানে প্রতি কেসে ১০০ টাকার বেশি বেড়ে হয়েছে ৪০০ থেকে ৪১০ টাকা। মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় ডিমের ওপর নির্ভর করছিলাম। এখন ডিমের দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। ’
জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ডিম। যে টাকায় এক হালি ডিম পাওয়া যায়, তা দিয়ে মাছ-মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। খুব অল্প খরচে ডিম একটি পুষ্টিকর খাবারের উৎস। সেটারও ক্রমাগত দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে বিপাকে পড়বে। ’ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৩৫.৩৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। ১০ বছরে ডিমের এই উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য মতে, স্বাভাবিক সময়ে পোলট্রি সেক্টরে দিনে চার কোটি পিসের বেশি ডিম উৎপাদন হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জে হালিতে বেড়েছে ১২ টাকা: মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ফার্মের লাল-সাদা প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১২ টাকা। বর্তমানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০ টাকা। শহরের সয়াধানগড়া দক্ষিণ পাড়া মহল্লার মুদি দোকানি রোকন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম হু হু করে বেড়েছে। পাইকাররা প্রতিটি ডিম সাড়ে ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করছেন। সেখান থেকে কিনে এনে আমরা খুচরায় বিক্রি করছি ১৩ টাকা। ’-কালের কণ্ঠ অনলাইন