বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব: পাথর-বালুর বিক্রি কমেছে, ‘লোকসানে’ দিশেহারা ব্যবসায়ীরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বালু-পাথরের ব্যবসা করেন হারুনুর রশীদ। রাজধানীর গাবতলীতে আমিন বাজার সেতুর পাশে বালুঘাট এলাকার শেষপ্রান্তে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মহামারির শুরুতে বালু আর পাথরে পরিপূর্ণ থাকতো তার গদি (বালু রাখার স্থান)। কিন্তু এখন গদির বড় অংশই ফাঁকা। তিন যুগে এত খারাপ সময় আসেনি তার। তার পরিচিত অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা এখন চেয়ে আছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) গাবতলী হাট সংলগ্ন নির্মাণসামগ্রীর গদিগুলো ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের করুণ অবস্থা। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়েছে নির্মাণখাতে। ট্রাক ও ট্রলারে বালু, ইট-পাথর আনতে বেড়েছে খরচ। সড়কপথে ৭-১০ হাজার আর নৌপথে ২৮-৩০ হাজার টাকা বেড়েছে। ফলে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর এতেই কপাল পুড়েছে এসব ব্যবসায়ীদের। কারণ দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আপাতত বন্ধ রেখেছেন নির্মাণকাজ।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার আশপাশের জেলার ইটভাটা থেকে ইট আসে গাবতলীতে। আর সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়সহ একাধিক জেলা থেকে নদীপথে ট্রলারে আসে বালু-পাথর। চলতি মাসের শুরুতে ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় পরিবহনে অস্বাভাবিক খরচ বেড়েছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বিক্রি কম হওয়ায় তারা পণ্য আনছেন কম। ফলে এসব পরিবহনের ট্রিপও কমেছে। ফিউচার স্টোন হাউজের সত্ত্বাধিকারী হারুনুর রশীদ জাগো নিউজকে জানান, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলিয়ে সুদিনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সেই সুদিনের দেখা আর মেলেনি। উল্টো প্রতিদিনই গুনছেন লোকসান। গদি ভাড়া ও কর্মীদের বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে। তেলের দাম যদি না কমে তাহলে তার অবস্থার আরও অবনতি হবে।
আক্ষেপ করে হারুনুর রশীদ বলেন, বেচাকেনা ৩৫-৪০ শতাংশ কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১ থেকে দেড়লাখ টাকার বালু-পাথর বিক্রি হতো, এখন সেটা ৭০- ৮০ হাজার টাকায় নেমেছে। অথচ এক মাস আগেও ট্রলারে করে এখান (গাবতলী) পর্যন্ত আনাসহ প্রতি সেফটি বালু ছিল ৩৫ টাকা, সেটা এখন ৪২ টাকা হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধরনের পাথরের দামও প্রতি বর্গফুটে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
শম্পা এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী এরশাদ জাগো নিউজকে জানান, বিক্রি কমে যাওয়ায় নতুন করে তারা নির্মাণসামগ্রী উঠাচ্ছেন না। এক মাসে আগেও অবস্থা ভালো ছিল তাদের। কিন্তু বাড়তি দামে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বন্ধ রেখেছে। গাড়িপ্রতি ২ হাজার টাকা বালুর দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, একটা ভবন তৈরিতে এক থেকে দেড়শ গাড়ি বালু লাগে। ২ হাজার টাকা যদি বাড়তি লাগে তাহলে ১০০ গাড়িতে দুই লাখ টাকা বাড়তি লাগছে। এ কারণে এখন বেচাকেনা অনেক কম। কাস্টমার যদি না আসে তাহলে আমরা বিক্রি করবো কার কাছে, আর লাভও করবো কী।
শুধু যে বালু-পাথরে দামই বেড়েছে তা কিন্তু নয়, ইটের দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। ইট বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, তেলের দাম বাড়ার পর ইটের দাম এখন বাড়তি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেও গাড়িপ্রতি (৩ হাজার) ইট বিক্রি হয়েছে ২৭-২৮ হাজার টাকায়। যেটা এখন ৩৭- ৩৮ হাজার টাকা। শীতের শুরুতে নতুন ইট কাটা শুরু হলে দাম কিছুটা কমে আসতে পারে। বালু-পাথর বহন করে এমন একটি জাহাজের সুকানি ও পণ্য আনলোড করা সর্দাররাও জানিয়েছেন জ্বালানির দাম বাড়াতে তারা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জাহাজ থেকে পণ্য নামান যে শ্রমিকরা তাদের নেতা কালু সর্দার বলেন, জ্বালানির দাম বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের শ্রমের মূল্য বাড়েনি। আগে যা ছিল এখনও তাই আছে। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে। সানজিদ-নাফিজ নামের জাহাজের সুকানি বলেন, জাহাজে ১২০ লিটারের মতো ডিজেল লাগে। এক একটা ট্রিপে ১০-১৫ দিন সময় যায়। আগে ডিজেলের ব্যারেল ছিল ১৬ হাজার টাকা, এখন লাগে ২১ হাজার টাকা। ৪-৫ ব্যারেল ডিজেল লাগে। খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরপর আবার বেড়েছে লাইন খরচ। দেখা যাচ্ছে পণ্য এনে যে টাকা পাচ্ছি সেটা ডিজেল ও লাইনেই চলে যাচ্ছে। ঋণে চলতে হচ্ছে আমাদের।
জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (রিহ্যাব) সদস্য ও ব্রিক ওয়ার্কস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন বলেন, রডের দামসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। নির্মাণ খরচ বাড়লে ক্রেতার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে ফ্ল্যাট। তখন এ খাতের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com