মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যা ঘটছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুনর্ব্যক্ত করেছে যে তারা মিয়ানমারের কোনো উসকানিতে পা দেবে না। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কখনই কোনো উসকানিতে পা দিই না। আমরা ঠা-া মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।’ বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করবে কিনা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, সম্ভাবনা আছে। তবে জাতিসঙ্ঘ এখন অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের যা করা দরকার আমরা তা করছি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে আগস্ট থেকে বেশ কয়েকবার তলব করেছে এবং তিনি বাংলাদেশের ভূখ-ে একাধিক মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়টি ‘স্বীকার করেছেন’।
তবে দূত জানিয়েছে, যুদ্ধে নিয়োজিত বিদ্রোহীরা ভারি কামান ও মর্টার নিক্ষেপ করেছিল। যার মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশের ভূখ-ের অভ্যন্তরে এসে পড়েছিল বলে অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিল দূত। বাংলাদেশ মিয়ানমারকে জনগণের জীবন ও জীবিকার ক্ষতি করে এমন কর্মকা- থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চলমান পরিস্থিতি মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী নিরীহ জনগণের মধ্যে ‘ভীতিকর’ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। মিয়ানমার থেকে গোলাবর্ষণে মানুষের প্রাণহানি ঘটে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জনগণ ও জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে দুই গ্রুপে অবহিত করেছে এবং সমগ্র অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন সহিংসতা বন্ধে তাদের সহযোগিতা চেয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষকে আরো স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে চলমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের নাগরিক যারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে, সেসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ব্যাহত হয়েছে। রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌম ভূখ- ও আকাশ সীমান্ত সম্মান জানানোর দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। বাংলাদেশও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে তার জিরো টলারেন্স নীতি এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রতি বিরূপ কোনো গোষ্ঠীকে আশ্রয় না দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসঙ্ঘে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে বাংলাদেশের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং সবাই একমত যে এটি একটি ‘গুরুতর সমস্যা’ এবং এর সমাধান কেবল প্রত্যাবাসনের মধ্যেই রয়েছে। বাংলাদেশ এখন কক্সবাজার ক্যাম্প এবং ভাসানচর দ্বীপে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আতিথ্য করছে এবং ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার পর থেকে তাদের একজনকেও প্রত্যাবাসন করা হয়নি।
জাতিসঙ্ঘে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের আলোচনার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘আমরা শান্তির বার্তা দিয়েছি। আমরা বলেছি আমরা শান্তি চাই। অস্থিতিশীলতা থাকলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের কল্যাণ ব্যাহত হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে চীন সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘তারা একটি সমাধান খুঁজে পেতে আগ্রহী এবং তাদের আন্তরিকতা আছে।’ তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়া চলছে এবং তিন পক্ষই এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে।