শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৩ অপরাহ্ন

শনিবার রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ,৮ শর্তে অনুমতি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২

বিশ্রামের প্যান্ডেল ভেঙে দিয়েছে পুলিশ

আট শর্তে রাজশাহীতে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে এই অনুমতি দেয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অনুমতি পাওয়ার পর নগরীতে মাইকিং করে সমাবেশের প্রচারণা শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে আটটি শর্ত মানতে হবে। শর্তগুলো হলোÍমাদ্রাসা ময়দান চত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনও অবস্থাতেই সমাবেত হওয়া এবং যান ও জন চলাচলে কোনও প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধমীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন কোনও কার্যকলাপ এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরূপ কর্মকা- করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকাতে কোনও ধরনের লাঠিসোঁটা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনও বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত (আইডি কার্ডসহ) তারা ব্যতীত কেউ আগামী ৩ ডিসেম্বর সমাবেশ শুরুর আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পাববে না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওই দিন দুপুর ২টা শুরু করে ৫টায় শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং রাউটার ব্যবহার করা যাবে না। যানবহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পাকিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে পাকিং করতে হবে। মূল সড়কে পাকিং করা যাবে না।
এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে তাদের জানানো হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তারা গণসমাবেশের জন্য মাদ্রাসা মাঠ ব্যবহার করতে পারবে। এর আগে তারা ওই মাঠ বা তার আশপাশের এলাকায় কোনও কার্যক্রম চালানো যাবে না।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এখনও পরীক্ষা চলছে। তিনি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। পরীক্ষা চলাকালে তিনি ওই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন না। এজন্য পরীক্ষা শেষ হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিএনপি শুধু ৩ ডিসেম্বর মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।
অন্যদিকে, সমাবেশের আগেই দূর থেকে আসা নেতাকর্মীদের বিশ্রাম ও রাতযাপনের জন্য মাঠের পাশে একটি জায়গায় গত সোমবার থেকে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) পুলিশ তা ভেঙে দিয়েছে। বিএনপির গণসমাবেশের জন্য চাওয়া মাঠের পাশে নির্মাণাধীন এই প্যান্ডেলে চার-পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
প্যান্ডেল তৈরির কাজে নিয়োজিত ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ‘তাকে এই প্যান্ডেল করার জন্য রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী বিপ্লব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সোমবার সারা দিন এই জায়গাটায় মাটি ফেলে ঠিক করা হয়েছে। সারা দিন বাঁশ বাঁধার কাজ করেছি। কাজ করার সময় রাজপাড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান এসে দেখেছেন। কিন্তু তাকে কিছুই হলা হয়নি। তখন নিষেধ করলে আমরা কাজ করতেন না। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওসি এসে প্যান্ডেলের বাঁশ খুলে ফেলতে বাধ্য করেন।’
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ‘গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি বিএনপির পক্ষ থেকে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য মাঠ চেয়ে আবেদন করা হয়। তারা রাজশাহী নগরের মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের জন্য আবেদন করেন। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ১ ডিসেম্বর থেকে তাদের মাঠ ব্যবহার অনুমতি দেন। তবে সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের অনুমতি এখনো মেলেনি। তবে আশ্বাস পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের রাতযাপনের জন্য সমাবেশের মাঠেই একটি প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করে হয়েছিল। মাঠের অনুমতি ছিল না বলে সোমবার ওই প্যান্ডেলের কাজ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এরপর মাঠের পাশে আরেকটি প্যান্ডেল নির্মাণ শুরু করলে সেখানে অনুমতি নেই, জানিয়ে সেটিও মঙ্গলবার ভেঙে দেওয়া হয়।’ রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তারা (বিএনপি) যে মাঠের অনুমতি নিয়েছে, তাদের যা করার সেখানেই করতে হবে। অনুমোদিত জায়গার বাইরে তারা কিছু করতে পারবে না।
বিশ্রামের প্যান্ডেল ভেঙে দিয়েছে পুলিশ: আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশের জন্য নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠ (হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে তার আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের বিশ্রাম ও রাতযাপনের জন্য মাঠের একপাশে তৈরি করা প্যান্ডেল ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। নির্মাণাধীন এই প্যান্ডেলে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মীর থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। ৩ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় এই গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে তৈরি করা এ প্যান্ডেল ভেঙে দেয় পুলিশ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ব্যক্তিগত সহকারী ও গণসমাবেশের মঞ্চ উপ-কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব বলেন, গণসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঠেকাতে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সে কারণে তার আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসবেন। তাদের বিশ্রাম ও রাতযাপনের জন্য মাদরাসা মাঠের একপাশে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছিল। বিকেলে তা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ।
তিনি জানান, ধর্মঘটের আগেই একাধিক জেলা থেকে বিএনপির অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী রাজশাহীতে ঢুকবেন। তাদের এ মাঠেই থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব জানান, মাদরাসা মাঠে সমাবেশের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ১ ডিসেম্বর থেকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের অনুমতি এখনো মেলেনি। তবে আশ্বাস পেয়েছেন তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপিকে নির্ধারিত মাঠেই সব কিছু করতে হবে। অনুমোদিত জায়গায় কিছু করতে পারবে না। তবে নিয়মের বাইরে কিছু করা হলে পুলিশ তা বন্ধ করে দেবে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলমান। তাই পরীক্ষা চলাকালে ওই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। পরীক্ষা শেষ হলে ১ ডিসেম্বর থেকে মাঠে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর বিএনপি ৩ ডিসেম্বরই শুধু মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com