ক্যানসারের নাম শুনলে সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনেন না। যে কোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে ক্যানসার। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারসহ প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে স্তন, ডিম্বাশয়, সার্ভিকাল, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই ক্যানসারগুলো একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তার জীবনযাত্রার মানের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এলপিইউয়ের এক্সিকিউটিভ ডিন ডা. মনিকা গুলাটি বলেছেন, ‘ক্যানসার বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে।’ তবে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, সার্ভিকাল ক্যানসার ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
ফুসফুসের ক্যানসার: ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার দেখা দিতে পারে নারীদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের তুলনায় নারী ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আবার পরোক্ষ ধূমপানের কারণেও নারীদের ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
স্তন ক্যানসার: স্তন ক্যানসার হলো নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্ণয় করা ক্যানসার। প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে একজন নারী এই ক্যানসারে ভোগেন। শারীরিকভাবে সক্রিয় না হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায় নারীদের মধ্যে। স্থূলতা বা মেনোপজের পরে অতিরিক্ত ওজন কিন্তু এই ক্যানসারের মূল কারণ। স্বাস্থ্যকর ওজনের বয়স্ক নারীদের তুলনায়, যাদের ওজন বেশি বা স্থূল তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
কোলোরেক্টাল ক্যানসার: কোলোরেক্টাল ক্যানসার একজন নারীর জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ, নিয়মিত চেকআপ, সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার মাধ্যমে নারীরা এই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারেন।
সার্ভিকাল ক্যানসার: মিলান ফার্টিলিটি সেন্টারের ডক্টর কামিনী রাও (পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ও চিফ মেন্টর) বলেছেন, ‘সার্ভিকাল ক্যানসার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ক্যানসার। এটি জরায়ুর কোষে, যোনি থেকে জরায়ুতে প্রবেশ করে।’ প্রতিবছর অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি নারী (৩৫-৪৪ বছর বয়সী) বিশ্বব্যাপী সার্ভিকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত ৩ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এজন্য মধ্যবয়সী নারীদের উচিত নিয়মিত গাইনোকোলজিকাল পরীক্ষা গ্রহণ করা।
ওভারিয়ান ক্যানসার: প্রিডোমিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. কানুরি রাও বলেন, ‘ওভারিয়ান ক্যানসার নারীদের মধ্যে ক্যানসারে মৃত্যুর প ম সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এটিকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ এর লক্ষণগুলো অস্পষ্ট হয়। ক্যানসারের সঠিক কারণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না, তবে বংশগত, জীবনধারা ও পরিবেশ দূষণকারীর সংস্পর্শ’সহ বিভিন্ন কারণের ফলে এই ক্যানসারগুলো বিকশিত হতে পারে।
নারীদের মধ্যে এই ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হলে ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই ক্যানারের মৃত্যুঝুঁকি কমানো যায়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া