বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, আট ধরনের প্রাণিজ আমিষে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর উপাদান আছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন বলছে- মাছ, গোশত, সামুদ্রিক খাবারসহ পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত খেতে পারছে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ পরিবার। বাকিরা পারছে না। সাধারণভাবে শিশু, গর্ভবতী মা ও অপুষ্টিতে ভোগা নারীদের এ ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। এসব খাবার তাদের নিয়মিতভাবে না পাওয়া আশঙ্কাজনক। গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক প্রতিবেদন বলছে, খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ৬৮ শতাংশ মানুষ। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে নি¤œ আয়ের পরিবার। এতে বিপুল পরিবারে পুষ্টির ঘাটতি আরো বেড়ে যাচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাস আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি গরুর গোশতের দাম ছিল ৬৬০-৭০০ টাকা। খাসির গোশতের দাম ছিল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। এখন খাসির গোশতের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে কেজিতে গরুর গোশতের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। আমিষের সবচেয়ে সস্তা উৎস ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের ডজন এখন ১৪০ টাকার আশপাশে। এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১১০-১১৫ টাকা। সাধারণের প্রোটিনের বড় আরেকটি উৎস ব্রয়লার মুরগি। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ২০০-২১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০-৫০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। টিসিবির তথ্য মতে, মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৬০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে এখন ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০-৫৫০ টাকা।
আমিষের আরেক উৎস দুধ। বাজারে তরল ও গুঁড়া এ দুই প্রকারের দুধ পাওয়া যায়। তরল দুধের দাম গত এক বছরে লিটারে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত এক বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ২৭-৩৫ শতাংশ। এদিকে সামনে রমজান মাস। এ সময়ে বাজারে ছোলা ও মসুর ডালজাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ে। তখন ভোজ্যতেলের চাহিদাও বেশি থাকে। এসব পণ্যের দাম বাজারে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আসে। মানভেদে মসুর ডালের দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ১০০-১৪০ টাকা। সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি সরকারের বেঁধে দেয়া দাম ১৯০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। মাছের মধ্যে রুই মানভেদে ৩৫০-৪৫০ টাকা দাম। চাষের কই কেজিপ্রতি ২৫০-৩৫০ টাকা এবং চাষের পাবদা মাছ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামের চাপে দেশে সীমিত আয়ের মানুষ এখন বাজার খরচ কাটছাঁট করছেন। তাতে স্বাভাবিকভাবে প্রাণিজ আমিষ কম খেতে পারবেন। বাজারে শুধু যে গোশতের দাম বেড়েছে তা-ই নয়, ফার্মের মুরগি, ডিম, দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। এই যখন দেশের বাস্তবতা। তখন সামর্থ্য না থাকায় দেশের বিপুল মানুষ যদি আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয়; তা হলে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেবে। দেশের অর্থনীতি হওয়া উচিত গরিববান্ধব। বাস্তবে সে অবস্থা কবে আসবে কেউ তা বলতে পারছেন না। সরকারের অর্থব্যবস্থাপনার অদক্ষতায় প্রতিনিয়ত দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে। একই সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল শুধু মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীর কব্জাগত হচ্ছে। তেমনি করোনাকাল থেকে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ অসহনীয় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা আশা করি, সরকার সাধারণ জনগণের স্বার্থে পুষ্টি চাহিদা পূরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।