দিনাজপুরের হিলি ফোরলেন সড়কের চলমান কাজ বন্ধ, ঠিকাদার উধাও। ফোরলেনের কাজ শুরুর পর গত একমাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। জিরোপয়েন্ট থেকে পানামা পোর্টের পুরো সড়কের কার্পেটিং তুলে ফেলে একপাশে আংশিক ঢালাই করার পর কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদাররা। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকসহ দূরপাল্লার যানবাহন, অটোবাইক, রিকশাচালকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে এলাকাবাসী, পরিবহনচালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ট্রাক চালক মো. কবির হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিন পানামা পোর্ট পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ে বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে যাই। কিন্তু পানামা পোর্টের গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত কার্পেটিং তুলে ফেলায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাকের স্টিয়ারিং ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে।’ ভারতীয় ট্রাক চালক অনিমেষ কুমার বলেন, আমি মাঝেমধ্যে ভারত থেকে পণ্যবোঝাাই ট্রাক নিয়ে আসি। হিলি জিরোপয়েন্ট থেকে পানামা বন্দরের গেট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। কাপেটিং না থাকায় ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই কারণে অনেক সময় ট্রাক একদিকে হেলে যায়। উল্টে যেতে পারে, এমন ভয় জাগে মনে। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই বন্দরে প্রবেশ করতে হয়। স্থানীয় চারমাথা মোড়ের দোকানদান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সড়কটি ফোরলেন করার জন্য শুরু করে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। প্রথমে সড়কের কাপেটিং তুলে ফেলে। এরপর সড়কের একপাশে কিছু ঢালাইয়ের কাজ করে। কিন্তু হঠাৎ করেই গত একমাস ধরে কাজ বন্ধ আছে। যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলোবালিতে দোকানে বসে থাকা যায় না। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’ হিলি নাগরিক উন্নয়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক মো. এনামুল হক খান বলেন, ‘হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা বন্দরের গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়কের ফোরলেন কাজ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। হাকিমপুর হাসপাতাল, কলেজ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগীসহ বিভিন্ন কাজের জন্য এলাকাবাসীকে ওই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের একপাশে কিছু কাজ করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজই বাকি আছে।’ এনামুল হক আরও বলেন, ‘পুরনো কার্পেটিংগুলো তুলে ফেলায় সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। বাইক, অটোবাইক, রিকশায় বসে থাকায় যায় না। এতে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুব বেগ পেতে হয়। তার সঙ্গে আছে ধুলোবালিও। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেপলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই)-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টটর (এমডি) গোপাল চন্দ্র বলেন, আর্থিক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে সড়কের দু’পাশের কিছু জমি অধিগ্রহণের সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধান হলেই সড়কের কাজ আবার শুরু করা হবে।’ দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. অনফ সরকার বলেন, হিলি বন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা পোর্ট গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়ক ফোরলেনে উন্নতিকরণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই। এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।’ অনফ সরকার আরও বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে রেখেছে।’ কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে, এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বলতে পারেননি তিনি।