হরেক রকমের পুষ্টি ও বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় ফল পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামের তিন বন্ধু। তাঁরা হলেন, সিংদিঘী গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে আসাদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলীর ছেলে ইমরান রহমান, ছাবেদ আলীর ছেলে চাঁন মিয়া। তিন বন্ধু বর্তমানে উপজেলার সফল মানুষের অনন্য উদাহরণ। তাদের বাগানের চাষকৃত পেঁপে বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় রপ্তানি হচ্ছে। ৮ বিঘা জমিতে যেদিকে চোখ যায় শুধু পেঁপে আর পেঁপে। তাদের বাগানের পেঁপের ফলন দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও। বর্তমানে তিন বন্ধু পেঁপে চাষ করে জীবনের অস্বচ্ছল থেকে আজ পরিবার পরিজন নিয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করছেন আর লাভবান হয়েছেন আর্থিকভাবে। তাঁদের বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার অনেক বেকার মানুষের । সরেজমিনে পেঁপে বাগান ঘুরে দেখা যায়, তিন থেকে চার ফুট উঁচু সারি সারি প্রতিটি পেঁপে গাছে ২০-২৫টি করে পেঁপে ঝুলে আছে। একেকটি পেঁপের ওজন হবে দুই থেকে আড়াই কেজি করে। পেঁপে ধরা গাছগুলো হেলে না পড়ে তাই দঁড়ি ও বাঁশ দিয়ে বেঁধে রেখেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা বাগানের পেঁপে কিনে নিয়ে যান। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলে সামনে আরও বেশি জমিতে পেঁপে চাষ করতে পারবেন বলে পেঁপে চাষিরা জানিয়েছেন। তিন বন্ধুর মধ্যে ইমরান রহমান ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। সে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। ইমরান জানায়, পেঁপে চাষ করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের আর্থিক সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে তিন বন্ধু ৮ বিঘা জমি বাৎসরিক ৮০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে পেঁপের বাগান করেন। এখানে মোট ৩ হাজার দুইশ হাইব্রিড টপ লেডি জাতের পেঁপের চারা রয়েছে। চারা, বীজ, সার, জমি প্রস্তুত ইত্যাদি খরচ হয়েছে প্রায় বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হয়েছে। এখনও গাছে অসংখ্য পেঁপে রয়েছে। চলতি বছর ১৫ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন ইমরান। অন্য চাষি আসাদুল ইসলাম বলেন, বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্বগুলো আমার উপর পড়েছে। খুবই টেনশনে ছিলাম। তখন আমরা তিন বন্ধু মিলে ৮ বিঘা জমি চার বছর যাবত ভাড়া নিয়ে পেঁপে চাষ করে আসছি। বর্তমানে এখান থেকে বাৎসরিক তিন লাখ টাকার মত আয় করতে পারি। এতে সংসারের দায়িত্বগুলোও ভালোভাবে পালন করতে পারছি। তিনি আরো বলেন, কাঁচা পেঁপের পাশাপাশি যদি পেঁপে গাছে পাকিয়ে বিক্রি করতে পারি তাহলে লাভের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে চলতি বছরে। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এস.এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, পেঁপে চাষি তিন বন্ধুর সফলতার পেছনে রয়েছে তাদের ঐকান্ত নিরলস প্রচেষ্টা। তারা উপজেলার সফল মানুষের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা কৃষি অফিস তাদেরকে সবসময় সার্বিক পরামর্শ দিয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, এরকম উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মদক্ষতা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি।