মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ৬ তারিখ আজ সোমবার। ১৯৭১ সালের এদিন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ স্থগিতের প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচির শেষ দিন ছিলো। দিকে দিকে স্বাধীনতাকামী জনতার সশব্দ পদচারণা, প্রাণে প্রাণে রক্তের শপথ এবং অযুত সংক্ষুব্ধ কণ্ঠে গীত হচ্ছিল পরম আকাক্সক্ষার বাণী-গানরূপে। সারাদেশে তখন জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ। এদিন শুরু হলো দেশব্যাপী জেল ভাঙ্গার পালা। সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনরত জনগণকে সমর্থন জানাতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলনে যোগ দেয়। এছাড়াও এদিন, ৭ মার্চের প্রাক্কালে, ইয়াহিয়া খান ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি বাগে আনতে ১০ মার্চ ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠক এবং ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার ঘোষণা করেন। উদ্দেশ্য ছিল ৭ মার্চের জনসভাকে ম্লান করে দেয়া। এদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেশ ক’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন এবং সেখানে হেনরী কিসিঞ্জার সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, Another reason for our not taking the lead is that west Pakistan is very suspicions that, we are supporting a separate East Pakistan state. If we tell yahya to call off the use of Force, it will merely fuel this suspicion.
এদিনও সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। খুলনায় গুলী বর্ষণের ঘটনায় ১০৪ জন হতাহত হওয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ঢাকায় পুলিশের গুলীতে ৩৭ জন হতাহত হয়। দেশজুড়ে বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ১২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনের নতুন তারিখ ঘোষণা করলেও বাহ্যিকভাবে অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের দু’ঘণ্টা পর ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটির এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। রাতে তাদের আরেক দফা বৈঠক বসলেও কোনো প্রতিক্রিয়া তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এদিকে এদিন জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক ও গবর্নর হিসেবে ঘোষণা করায় অবস্থার আরো অবনতি ঘটে।
কামরুদ্দিন আহমেদ ঐ সময়ের চিত্রটি এভাবে তুলে ধরেছেন, “ শেখ সাহেব তার ৭ মার্চের ভাষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্রদের প্রধান কার্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ বাহিনী ও আনসারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছিলো। ছাত্ররা এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো যার প্রেক্ষিতে শেখ সাহেব তার ৭ মার্চের বক্তৃতায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই ৭ মার্চের সূর্যোদয় ঘটলো।”
রণাঙ্গনের সৈনিক, ২০১৪ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী তার ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১’ শীর্ষক গ্রন্থে একাত্তরের আজকের দিনের ঘটনাবলী সংক্ষেপে তুলে ধরেন এভাবে, “ প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেতারযোগে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার কথা ঘোষণা করেন। সেই সাথে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর হিসেবে নিযুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। ঐ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গেট ভেঙ্গে ৩৫০ জন কয়েদী পলায়ন করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলীতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। ধরা পড়ে মাত্র ১৬ জন।”