বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে আদালতে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান এবং কোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা। তারা জানান, আজ রোববার কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানের ভেতরে একটি নড়বড়ে তিন পায়ার টুলে বসিয়ে ঢাকা মহানগর জজ কোর্টে আনা হয় রিজভীকে। সেখানে ধরার হাতলও ছিল না। কারাগার থেকে পুরান ঢাকার ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে দীর্ঘ সময়ের পথে প্রচ- গরমে এভাবে আনার ফলে রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একইভাবে তাকে কোর্টে আনা হলে আইনজীরীরা বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজভীকে কারাগার থেকে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে, তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন এমন পরিবহনের ব্যবস্থার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা কার্যকর হয়নি। রিজভীর প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মশিউর রহমান শাহ শান্ত বলেন, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একজন প্রথম শ্রেণির ডিভিশনপ্রাপ্ত সম্মানিত বন্দী। তিনি বলেন, পিআরবি, প্রবিধান ৪৮০ অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণীর বিচারাধীন বন্দীদের প্রিজনভ্যান বা ভাড়া করা গাড়িতে আনা-নেয়া করতে হবে এবং তাদের যাতায়াতে যুক্তিসঙ্গত আরাম ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
আইনজীবী মশিউর রহমান আরো বলেন, যেহেতু একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই যাতায়াতে স্বস্তি বোধ করেন সেভাবেই কোর্টে আনা-নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিজ্ঞ আদালত মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আজ রোববারও রিজভীকে যে প্রিজন ভ্যানে আনা হয়েছে সেখানে কেবল একটি টুল দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে ধরার বা সাপোর্টিং কিছু ছিল না। এর আগে গত ২ মার্চ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রুহুল কবির রিজভীকে যে প্রিজন ভ্যানে কোর্টে আনা হয়, সেখানে বসার কোনো বে বা ধরে দাঁড়ানোর জন্য হাতল ছিল না। ফলে কারাগার থেকে পুরানো ঢাকার ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে দীর্ঘ সময় তাকে প্রিজনভ্যানের ভেতরে একটি টায়ারের ওপর বসে আসতে হয়।
রিজভীর আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে আবেদন করলে আদালত হাজতখানার ওসিকে নির্দেশ দেন যেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কারাগার থেকে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে তার সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আইনজীবী মশিউর রহমান বলেন, রিজভী একজন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি। তাকে সর্বদা লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে অন্যের সাহায্য দরকার হয়। এমন একজন ব্যক্তিকে সেই কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে প্রিজন ভ্যানে যেভাবে আনা হচ্ছে তা অমানবিক, অসাংবিধানিক ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিনই বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন রিজভীকেও আটক করে কারাগারে নেয়া হয়। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দলের বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে নিয়মিত কথা বলতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও হামলা-মামলা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করতেন।