দিনাজপুরের হিলি বাজারে প্রতিদিন সকাল ৭ থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত বসে শ্রমিকের হাট। সেখান থেকে দরদাম করে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। নিত্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধির কারণে মজুরি ৫০০ টাকা নিচ্ছেন এসব শ্রমিকরা। তবে মজুরির দামটা অনেকটাই বেশি বলছেন গৃহস্থরা। সোমবার (৬ মার্চ) সকালে হিলি বাজারের চাউলহাটি রোডে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ জনের একদল দিনমজুর কাজের আশায় তাদের কাজের সরঞ্জাম সামনে রেখে বসে আছেন। সবার চোখ যেন খুঁজছে একজন লোক। যে এসে বলবেন, কাজ করবেন? দরদাম করে নিয়ে গিয়ে সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ থেকে ৫ টা পর্যন্ত তাকে দিয়ে বাড়ি যে কোন কাজ করে নিবেন। বিনিময়ে হয়তো দুপুরে খাবার খেয়ে ৫০০ টাকা মজুরি দিবেন। হিলির বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আসে এ বাজারে। তারা কেউ কারও আত্মীয় নয়। তথাপি দেখে মনে হবে তারা একে-অপরের কাছের মানুষ। একটা কাজ পাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে তারা লাইন ধরে তারা সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকেন। সংসার চালানোর মতো তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই এসব দিনআনা মজুরদের। মানুষের বাড়িতে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করেই চলে তাদের সংসার। প্রতিদিন সকালে কাজের আশায় আসা শ্রমিকরা অনেকেই কাজ না পেয়ে প্রায়ই খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে তাদের। পরিবারে তাদের প্রত্যেকের পরিবারে রয়েছে ৩ থেকে ৫ জন সদস্য। হিলির বৈগ্রাম গ্রাম থেকে আসা ৫৪ বছর বয়সী দিনমজুর আজাহার আলী বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করে কাজের সন্ধানে হিলি বাজারে আসি। গৃহস্থরা বাজারে আসেন তাদের গৃহস্থালি কাজ করে নিতে। আগে জিনিসপাতির দাম কম ছিলো, তাই ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা মজুরি নিতাম। কিন্তুু বর্তমান সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বেশি, এই জন্য আমরা একবেলা খেয়ে ৫০০ টাকা মজুরি নিচ্ছি। সাতনী গ্রামের ৫২ বছর বয়সী শ্রমিক আতাউর ইসলাম বলেন, হারা গরীব মানুষ, হামার তো আর আবাদি জমি নাই। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। ছোলপল সবাই আলদা হচে। তারা তাদের মতো সংসার নিয়ে ব্যস্ত, হামার ছাও কে দেখবে, কাম না করলে খামু কি? প্রতিদিন সকাল হলোই এ্যাটে আসু, মানুষ কামত (কাজ) নিয়ে যায়। এতে দিনপাত ভালোই চলে। শ্রমিক কিনতে আসা শাহ আলম বলেন, বাড়িতে ইটের কাজ করছি, রাস্তায় বালু পড়ে আছে তাই একজন জন শ্রমিক নিলাম। একবেলা খাওয়ায়ে ৫০০ টাকা করে দিতে হবে। শ্রমিকের দামটা অনেকটাই বেশি, কাজ করে নিতে হবে, তাই নিলাম। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে তাদের ৫০০ টাকা মজুরিটাও ঠিক আছে।