বরিশাল অঞ্চলের অবৈধ ২২২টি ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদ কাজ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট)। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ -এইচআরপিবি’র আবেদনে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরেসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধে সাত দিনের মধ্যে দেশের সব জেলা প্রশাসকের প্রতি নির্দেশনা জারি করতে গত বছর ১৩ নভেম্বর মন্ত্রীপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পরিবেশ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেদিন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এ ছাড়া রুল জারি করে হাইকোর্ট জানতে চেয়েছিলেন, দেশের সব জেলায় অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবের কাঠের ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের নিষক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধ ইট প্রস্তুত, ভাটা স্থাপন ও ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আইনজীবী মনজিল বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রী পরিষদ সচিব পর্যবেক্ষণ কমিটি করেছেন বলে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তার সাথে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে জানান এ বরিশাল বিভাগে ২২২টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এ প্রতিবেদন দাখিলের পর গত ১২ মার্চ এইচআরপিবির পক্ষে আরেকটি আবেদন করে এসব ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদ চাওয়া হয়। সে আবেদনের শুনানির পর আদালত এসব ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদ কাজ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই না, এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশালে ২২২টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে বরিশাল জেলায় ১১১টি, পটুয়াখালীতে ৭টি, ভোলায় ৩৬টি, পিরোজপুরে ২৮টি ও ঝালকাঠিতে ৪০টি ইটভাটা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা অবৈধ। আর ইটভাটায় জ্বালানি হিসেব কাঠের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রতি বছর শীত মৌসুমকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ ইটভাটা চালু করা হয়। আর বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় দেদারসে পোড়ানো হয় কাঠ। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বা হচ্ছে না বলে বিবাদীদের নিষক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিটটি করা হয় বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।