রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

আত্মহত্যা মহাপাপ

ইসরাত জাহান সারা:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

আত্মহত্যা মহাপাপ। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নানা শরিয়ত দান করেছেন। আর শরিয়ত মোতাবেক আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ। এর প্রতিফল চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আত্মহত্যা শব্দের অর্থ হচ্ছে- নিজেকে হত্যা অর্থাৎ যখন একজন মানুষ নিজেই তার নিজেকে হত্যা করে তখন তাকে আত্মহত্যা বলে।
শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ এটি। সব ফিকাহবিদ ও চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরিব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা আল-আনকাবুত-৫৭)
আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। কুরআনে এসেছে- ‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ (সূরা ইউনুস-৫৬) আত্মহত্যা সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত হয়েছে। বলা হয়েছে- ‘তোমরা নিজের হাতে নিজের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’ (সূরা বাকারা-১৯৫)
অপর আয়াতে আত্মহত্যার কঠিন শাস্তির বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন- ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ (সূরা আন-নিসা : ২৯-৩০) জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমাদের আগেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।’ এ ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি-৩২৭৬, মুসলিম-১১৩)
আত্মহত্যা তো দূরের কথা শরিয়ত মোতাবেক কোনো বিপদে পতিত হয়ে বা জীবন যন্ত্রণায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করাও নিষেধ। যেমন আনাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ (বুখারি-৫৬৭১, মুসলিম-৬৯৯০)
সুতরাং আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় আল্লাহর পথে নিজেকে পরিচালিত করা। ইসলামী বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, এতে করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। মনোচিকিৎসক ক্যাম্পবেল ওয়াট বলেছেন, এটি আমাদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব যে, একজন মানুষকে তার আত্মহত্যা করার ইচ্ছার হাত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসায় আমরা যদি সফল হই যদি ব্যক্তির কারণগুলোকে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয় তাহলে সেটিই হবে বড় উপকার। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক-৩) শিক্ষার্থী : কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com