আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চরফ্যাশনে আগাম তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর চাহিদা বেশি থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে নিচ্ছেন বেপারীরা। একইসঙ্গে বাম্পার ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় তরমুজকে ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর চাষি ও বেপারীরা। দ্রুত বাজার ধরাতে চলছে দিনরাত পরিচর্যা। অনুকূল পরিবেশ কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফার আশা করছেন চাষিরা।এদিকে প্রকৃতিতে গরম শুরু হওয়ায় রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বড় বড় শহরে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। চাষিরা জানান, ঢাকা থেকে আসা বেপারীরা ক্ষেত থেকে তরমুজ কেটে ট্রাক বোঝাই করে সরাসরি মোকামে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর শীতের শেষে উপকূলে ঝড়-বাদল আঘাত হানলে আগাম চাষের তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।এতে অনেকে লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে তরমুজ চাষ ছেড়েও দিয়েছে। কিন্তু এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার চাষী (কৃষক) মোঃ মোশারেফ হোসেন তরমুজের ব্যপারের জিজ্ঞাসা করলে মুখে অট্রোহাসি দিয়ে বলেন,এক একর জমিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচে আগাম তরমুজ চাষ করেছি। মাঠে(খেতে) যে পরিমাণ তরমুজ দেখেছি এখনো প্রায় ৪লাখ টাকার বিক্রি করেছি। আবহওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি আরো ৭/৮লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পরবো। ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ৪ লাখ টাকার তরমুজ। গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজ আবাদে একর প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ বাড়লেও বিক্রিতে আগের তুলনায় বেশি লাভ হবেন বলে জানান তিনি। মাঝের চরের কৃষক মো. লাভলু জানান, ১০ কেজির বেশি ওজনের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ মোকামে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার ও ৮ কেজির কম ওজনের তরমুজ ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিব নগর ২নম্বর ওয়ার্ড শামিম নামের এক কৃষক খেত থেকে বড়, মাঝারী ও ছোট আকারের তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রলার বোঝাই করছেন। লঞ্চ যোগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান। এর মধ্যে খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠিয়েছেন পাইকাররা পেয়েছেন চওড়া দাম। চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরে চরফ্যাশন উপজেলায় তরমুজের চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়ছে ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ১৫ হাজার ৮শ’২৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। কৃষক শামিম পাটওয়ারী জানান, ১২ বছর যাবত তরমুজ চাষাবাদ করে আসছি। আগাম জাতের তরমুজ ৮ বছর পর্যন্ত করা হয়নি। তাতে ব্যপক লোকসান গুনতে হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদ করে বেশ লাভমান হয়েছি। এ বছর আড়াই একর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করেছি। সার ওষুধের দাম বেশি হলেও ফলন ভালো হওয়া খুশি আমরা। এই চরের চারদিকে বেরিবাঁধ থাকলে জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ভাই’র কাছে এর বেড়িবাধের দাবী করেন। চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক জানান, চরফ্যাশন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে মুজিবনগরে তরমুজের চাষাবাদ বেশি। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদেরকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদে কৃষকদের সহযোগিতা করায় ভালো ফলন হয়েছে।