চলমান বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফরি স্যাকস। তার মতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার না হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘জনগণের প্রয়োজনের সময়ে জাতিসংঘ: বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের দফতর ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এই দুই দিনের আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ প্রযুক্তি ও ও চ্যালেঞ্জ কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকে না এবং এজন্য আঞ্চলিক সহযোাগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী আছে এবং এদের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক বিরোধ কাম্য হতে পারে না বরং তাদের বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে আমি খুব সহজভাবে যা ঘটা উচিত সেটি বলছি কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে সহযোগিতা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দরকার। কারণ এটি না হলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জেফরি স্যাকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে ভাগ করে দেওয়াটা একটি ভয়ঙ্কর চিন্তা রয়েচে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটি স্নায়ু যুদ্ধ হোক এটি চাই না। পৃথিবীতে এমন কোনও কিছু ঘটেনি যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দুই ভাগ হয়ে যেতে হবে। এটি একটি ভয়ঙ্কর ধারণা ও বোকামি। আমাদের উচিত হবে সহযোগিতার ওপর মনোযোগ দেওয়া এবং আমার বিবেচনায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল একে অপরকে সহযোগিতা করা দরকার।’ জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিরোধ আছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক দেশ তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে জাতিসংঘে সমর্থন করেনা।
স্যাকস বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ভারত দাবিদার কিন্তু এটির চরম বিরোধিতা করে পাকিস্তান। একইভাবে জাপানের বিষয়ে বিরোধিতা করে চীন, ব্রাজিলের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা। সেজন্য প্রতিবেশীরাই সাধারণভাবে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।’ জেফ বেজোস, বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ ও ইলন মাস্ক এই চারজন আমেরিকানের কাছে ৫০,০০০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আছে এবং এর ফলে মুষ্টিমেয় লোকের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে । তিনি বলেন, ‘এভাবে কোনও সমাজ চলতে পারে না। যে পৃথিবীতে দুঃখ কষ্ট দূর করতে জন্য যথেষ্ট কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না সেখানে এটি একটি অত্যন্ত বাজে ব্যবস্থা।’
মার্কিন অর্থনীতিবিদ বলেন, পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই এবং এজন্য শুধু তাদের সহযোগিতাই যথেষ্ট। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পরে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে পার ছেনা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র এবং গোটা বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সঙ্গে স্নায়ু যুদ্ধের চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন দেশকে যেকোনও একটি দেশ বেছে নেওয়ার জন্য বলছে।’