জাদুকে আরবিতে বলা হয় সেহর। কালো জাদু করা শয়তানি ও ইসলামে একটি ঘৃণিত কাজ। বর্তমান সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা কেউ সুখে কিংবা ভালো থাকুক বা তার জীবনে উন্নতি ঘটুক তা তাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। তাই তারা সরাসরি ক্ষতি করার সুযোগ না পেয়ে পরোক্ষভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। পরোক্ষভাবে ক্ষতি করার জন্য যার ক্ষতি করবে তার পশম, চোখের পাপড়ি, নখ, চামড়া, ব্যবহৃত পোশাক সংগ্রহ করে বা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তাকে জাদু করে। জাদুর প্রভাবে সে অসুস্থ হয়ে যায়, শরীর নষ্ট হয়ে যায়, কষ্ট পায় এবং মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমনকি জীবনহানিও ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
জাদু সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আলোচনা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর। আর তারা কাউকে শেখাতো না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরি করো না।’ (সূরা বাকারা-১০২)
জাদু খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর। কেউ জাদু করে থাকলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এই জাদু থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাকে প্রথমত জানতে হবে জাদুকর কিভাবে জাদু করেছে। তা জেনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এমনকি বিভিন্ন দোয়া রয়েছে তা পাঠ করে ফুঁ দিলে জাদু নষ্ট হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। হজরত জিবরাইল আ: রাসূল সা:-কে একটি দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছিলেন, দোয়াটি হচ্ছে- ‘বিসমিল্লাহি আরকিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহ ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরকিক।’ অর্থাৎ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁঁক করছি। কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। (মুসলিম) জাদু থেকে মুক্তি পেতে হলে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহার জাদুবিষয়ক আয়াতের সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ও পাত্রে পানি রেখে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি পান বা গোছল করালে ইনশা আল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। এ ছাড়া নিম্নবর্ণিত দোয়াটি পাঠ করে ঝাড়ফুঁঁক করা যেতে পারে। আনাস বিন মালিক রা: বর্ণিত- রাসূল সা: নিম্ন উল্লিখিত দোয়াটি পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁঁক করতেন। ‘আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বাসি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।’
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী, আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী, আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে। (বুখারি)
সর্বোপরি কেউ যেন আমাকে জাদু করতে না পারে সে জন্য নিজেকে সর্বদা আমলের মধ্যে থাকতে হবে। বেশি বেশি করে তাসবিহ পাঠ ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতে হবে। এ ছাড়া নিম্ন বর্ণিত দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে জাদু ও বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। দোয়াটি হলো- ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’ অর্থাৎ- আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি। জাদু করা বা জড়িয়ে যাওয়া এবং আস্থা রাখা ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা হলো- শরাবখোর বা মদ্যপায়ী, রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী ও জাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। (মুসনাদে আহমাদ) লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।