শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: নির্ধারিত সময়ের আগেই উৎপাদনের পরিকল্পনা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩

নির্ধারিত সময়ের আগেই মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে, তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা যাবে। এমন কথাই জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরাও নির্ধারিত সময়ের আগেই তা শুরু করে দিতে চাচ্ছেন।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণ হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জাইকা) সহায়তায় নির্মাণাধীন প্রকল্পটির বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯১ শতাংশের বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত বাকি প্রকল্পগুলো মিলিয়ে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কমিশনিংয়ের কথা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে কেন্দ্রের কমিশনিং সংক্রান্ত নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। তবে এর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন চালু করা সম্ভব।
সিপিজিসিবিএলের নির্বাহী পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সেটিকে সামনে রেখে দ্রুতই কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেস্টিং ও কমিশনিং হবে। এছাড়া মাতারবাড়ী পোর্টের কাজও প্রায় শেষ দিকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেটি দ্রুত হস্তান্তর করা হবে।
ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় সম্প্রতি পায়রা ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। তাই মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুতই উৎপাদনে আসার সুখবর দিলেও জ্বালানি নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জাপানের সিংহভাগ অর্থায়নে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। ফলে কয়লার ব্যবস্থাও তারা করছে। পরবর্তী সময়ে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
সিপিজিসিবিএল সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। এটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরু থেকেই কাজ চলছে বিশেষ তদারকির মাধ্যমে। তবে এ প্রকল্পে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রই নয়; এর আওতায় কেন্দ্রের কয়লা লোড-আনলোড জেটি, টাউনশিপ, সঞ্চালন লাইন এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত। ফলে একই সক্ষমতার অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে এটি ব্যয়বহুল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাকি ৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব অর্থায়ন। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি মেনে নির্মিতব্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ১ হাজার ৬০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে মাতারবাড়ী জয়েন্ট ভেঞ্চার কনসালট্যান্ট (এমজেভিসি)। দেশে বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত উৎপাদনে আসলে বাংলাদেশ ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম গণমাধ্যমকে বলেন, জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খরচ কম হলে কোল পাওয়ার প্লান্ট আর্থিকভাবে বিপিডিবিকে সাশ্রয়ী করবে। আর তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমালে কয়লা অন্তত তিন-চার বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বস্তি দেবে। ২০২৭ সালের মধ্যে সাত হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। কয়লার জোগান নিশ্চিত ও সাশ্রয়ী মূল্য পেলে এবং সার্বক্ষণিক এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা দেবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com