ঘনিয়ে আসছে বাংলা ১৪৩০ নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর। এই দুই উৎসব ঘিরে বাজারে জমে উঠেছে বরিশালের সব ধরনের কেনাকাটা ধুম। আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালিত হবে সারাদেশে। এর ঠিক সপ্তাহখানেক বাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। ঈদ ও নববর্ষ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বরিশালের শপিংমল ও মার্কেট গুলো। এরই মধ্যে বেচাকেনায় জমে উঠেছে বরিশাল নগরীর ফ্যাশন হাউস গুলোতে। সকালে তেমন ক্রেতা উপস্থিতি না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যারা ইতোমধ্যে মার্চ মাসের বেতন পেয়ে গেছেন, তারা আগে-ভাগে ছুটে আসছেন মার্কেটে। মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করছে করছেন কেনাকাটা। আর যারা আগামী সপ্তায় বেতন ও পহেলা বৈশাখের উৎসবভাতা পাবেন তারা কেনাকাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবার নতুন কি পোশাক-আশাক এসেছে মার্কেটগুলোতে সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন নগরবাসী। এ মুহূর্তে সবার নজর পহেলা বৈশাখ ও ঈদের পোশাকের দিকে। সূত্রমতে, রবিবার সরকারি চাকরিজীবীরা মার্চ মাসের বেতন পেয়ে গেছেন। যদিও এরই মধ্যে অনেক বেসররকারি ব্যাংক ও কোম্পানি তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করেছেন। আর আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে পহেলা বৈশাখের উৎসবভাতা পেয়ে যাবেন সরকারি- বেসরকারি চাররিজীবীরা। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে গেছে। করোনা মহামারির প্রকোপ না থাকায় প্রায় তিনবছর পর এবার প্রানখুলে মুক্ত বাতাসে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উদযাপন করবেন সারাদেশের মানুষ। এ কারণে এবার সাধ্যমতো সবাই কেনাকাটা করছেন। বরিশাল নগরীর সদর রোডের টপটেন, চন্দ্রবিন্দু, পোশাক বাজার, ভারগো, প্লাস পয়েন্ট, ইজি, দর্জিবাড়ি এবং বৈশাখী শো-রুমে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদেকে সামনে রেখে দিন যতই যাবে ভিড় ততই বাড়বে। আর ভিড় এড়াতে রমজানের প্রথম দিকে ঈদের কেনাকাটা সেরে নিতে শপিংমলে আসতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। পছন্দের পোশাক বাছাই করতে নেই কোনো কমতি। পছন্দের রঙ, ডিজাইন ও উপাদানের পোশাক নিতে পরখ করে দেখে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তবে পোশাকের মান নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের দাবি, বেশিরভাগ দোকানে খুঁজে পাচ্ছেন না ভালো মানের পোশাক। দাম নিয়েও রয়েছে অসন্তুষ্টি। বরিশাল সদর রোডে একটি শপিংমলে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, গতবারের তুলনায় এবছর পোশাকের দাম অনেক বেশি। এছাড়া নতুন কালেকশন এখনও তেমন আসেনি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি,দেশে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পোশাকের দাম।পাশাপাশি এলসি সমস্যার কারণে ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্যের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা। বরিশাল টপটেন শপিংমলের ম্যানেজার মো: ইমরান শেখ বলেন, ঈদ উপলক্ষে নতুন সব ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছেন তারা। তবে বাহিরের কাপড় গুলোর দাম একটু বেশি ডলারের কারনে।তবে পরিবহনসহ সব খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার দাম কিছুটা বাড়তি। গীর্জা মহল্লা একটি মার্কেটে আসা রুকাইয়া জেবিন বলেন,সামনে ঈদ অল্প অল্প করে মার্কেট করে রাখছি,সামনে ভিড় বাড়বে তাই। কিন্তু মার্কেটের অবস্থা খুবই খারাপ। দাম অতিরিক্ত। আর নতুন মডেলের কাপড় এখনো আসেনি বলে মনে হচ্ছে। নগরীর চকবাজারের জাহানারা মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আশা সামিয়া বেগম বলেন, না পাড়ি চাইতে,না পাড়ি বলতে পূর্বের চেয়ে এবারে বাজারে রেডিমেড পোষাকের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বাজেট নিয়ে মার্কেটে এসেছি এখন দেখছি আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে পোষাকের দাম তারপরও ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে। বরিশাল সদর রোডের ইজি ফ্যাসনের ম্যানেজার বলেন, মো: ফরহাদ বলেন, দাম আগের মতই আছে।তবে এলসির কারনে ফরেন কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি। নতুন বাজারের ঢাকা ফ্যাশনের কর্মকর্তা মোঃ মাহিন খান জানান, আমরা ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই এবার ঈদের সকল পোশাক উঠিয়েছি। দামও সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম একটু বেশি, তবে পোষাকে মান অনুযায়ী দাম আমাদের ঠিক আছে। এদিকে ঈদ সামনে রেখে শপিংমলে অনিয়ম পেলে মার্কেট কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমী রানী মিত্র বলেন, ‘আমাদের বাজার তদারকি অভিযান অব্যহত রয়েছে। রমজানে যারা দাম বাড়াবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মানুষের জন্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।’ তিনি আরো বলেন,ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন কোন ঘটনা ঘটলে প্রমানসহ লিখিত অভিযোগে অবগত করুন বা ১৬১২১ নম্বরে যোগাযোগ করুন। অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তবে দিন যত গড়াবে কেনাকাটা আরও জমে উঠবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আকর্ষণীয় পোশাক মানে ও দামে সাধ্যের মধ্যে থাকবে বলে আশা করছেন ক্রেতারা।এবারের ঈদে পছন্দের পোশাক নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরবেন ক্রেতারা, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।