৬ রানে নেই ২ উইকেট, ১৬ রানে উইকেট হারায় ৪টি। অর্থাৎ ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মোটে ১৬ রান আসে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। মুলতানে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে পাকিস্তান বোলারদের তীব্র আক্রমণে ভাঙ্গন ধরে টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপে। অবশ্য শুধু এই ম্যাচ নয়, সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচেও পাকিস্তানি বোলারদের সেই তীব্র স্রোত রুখতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে এক তরুণের হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিল বাংলাদেশ, তবে তার ৭৩ বলে ৭৫ রানের ইনিংসেও শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের। খুব চেষ্টা করেও হেরে যেতে হয় ২৩ রানের ব্যবধানে। সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যায় প্রথম তিন ম্যাচ হেরেই, চতুর্থ ম্যাচে এসে হারানোর কিছুই ছিল না। তবুও যেন জড়তা কাঁটছিল না, ১৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আজও ধুঁকছে টাইগাররা।
প্রতিদিন এমন পানসে ম্যাচ দেখতে এখন রুচিতে বাঁধ সাধে। বোলিংয়ে জোড়া-পট্টি কিন্তু ব্যাটিংয়ে প্রতিনিয়ত ধস। আর কতও ধৈর্য ধরে বসে থাকা যায়! এই ভেবে যেইনা আপনি টিভির পর্দা বন্ধ করতে নিবেন, তখনই দেখা মেলে গত ম্যাচে দলের সেরা পারফর্মার সেই তরুণকে। এরই মাঝে ব্যাটের কারিশমায় স্কয়ার কাটে নান্দনিক একটি চার। ভাবলেন গত ম্যাচেও এই তরুণের ব্যাটেই তো লড়াই করেছিলাম, ছেলেটি পাকিস্তানি বোলারদের খাবি খাইয়ে খেলেছিলো বেশ। তবে আরেকটু দেখিনা কি করে আজ? এরপরের গল্পটা ম্লান আলোয় অম্লানতার। যেনো আমাবস্যার ঘোর-অন্ধকারে এক ফালি চাঁদের আলোর দেখা মেলা। হ্যাঁ, সেই তরুণের ভূমিকা ছিলো ঠিক এমনই। তরুণের পরিচয় সাকিব আল হাসান, আজকের বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।
যা হোক সেদিনও এক পাশ আগলে রেখে ক্রমশ এগিয়ে চলছিলেন দলকে। অন্য প্রান্তে তখনো আসা-যাওয়া বহমান। বিদায় নিয়েছে আরো চারজন ব্যাটসম্যান। দলীয় সংগ্রহ তখন ২৮ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে মোটে ১০৯ রান। সর্বোচ্চ ১৪ এসেছে রেজার ব্যাটে। অবশেষে ১০ নাম্বারে ব্যাট করতে নামা মাশরাফি কিছুটা সঙ্গ দিতে পারলেন সাকিবকে। সঙ্গ পেয়ে সাকিব আর ভুল করেননি, গত ম্যাচে যে পূর্বাভাস পূর্ণতা পায়নি, তবে আজ যেন তার তেষ্টা মেটালেন। ধীরে ধীরে ছুঁয়ে নেন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বারের মতো তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে খেলেন ৮ চারে ১২০ বলে ১০৮ রানের শুষ্ক গলায় জল ঢালা ইনিংস।
সতীর্থদের ব্যর্থতা উপেক্ষা করে সাকিবের খেলা সেই ইনিংস বাংলাদেশকে সেদিনও রক্ষা করতে পারেনি, হেরে যেতে হয় ৭ উইকেটের ব্যবধানে। বল হাতে সাকিব নিয়েছিলেন সর্বনি¤œ ইকোনমিতে কামরান আকমলের উইকেটখান। তবে প্রতিকূল মুহূর্তে ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে অনবদ্য এমন পারফরম্যান্স সাকিবকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার খেতাব। সেই দিন থেকে আজকের দিন পার্থক্য ১৬ বছরের। কিন্তু সেই মুহূর্ত আজও ফেরে স্মৃতির দোলাচালে। মুলতানে সাকিবের রাজ করা সেই দিনটি আজও স্মৃতিতে অম্লান। ২০০৮ সালের আজকের এই দিনেই তো সাকিব হয়ে উঠেছিলেন ‘একদিনের মুলতানের সুলতান’!