বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন

তাঁত শিল্প বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩

সদ্য গত হওয়া ঈদুল ফিতরে জমেনিটাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প বাজার- একটি জাতীয় দৈনিকে এই কবর ছেপেছে। শাড়ি কাপড়ের পাইকারি হাট ও জেলার শপিংমলগুলোতে ব্যবসার মন্দাবস্থা। অতীতে দেখা গেছে ঈদের দু’মাস আগে থেকেই দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, সদর উপজেলার করটিয়া হাট ও কালিহাতী উপজেলার বল্লা রামপুরে বেচাকেনার ধুম পড়ে যেত। দেশের পাইকারি ক্রেতারা তাঁতীদের কাছ থেকে কাপড় কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিয়ে যেতেন। উৎপাদন বাড়াতে শ্রমিকদের সারাক্ষণ তাগিদ দিতেন মালিকরা। ক্রেতাদের অর্ডার পূরণ করতে হিমশিম খেতে হতো তাঁতমালিকদের। এখন নেই খটখট শব্দ। মহাজন অতিরিক্ত শাড়ি উৎপাদনের জন্য তাগিদ দিচ্ছেন না। হাটে যেসব তাঁতী কাপড় বিক্রি করছেন, তাঁদের লাভ সীমিত। কেউ শ্রমিকদের মজুরি শোধ করার জন্য উৎপাদন খরচেও বিক্রি করে দিচ্ছেন শাড়ি। শেষ মুহূর্তেও তাঁতীদের রয়ে গেছে হাজার হাজার শাড়ি।
ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট ও নিউমার্কেটে অগ্নিকা-ের প্রভাব পড়েছে তাঁতের বাজারে। হাট, বাজার, শহরের বিক্রেতা ও তাঁতীদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। আরো জানান, মহামারীসহ মন্দা পরিস্থিতির কারণে শাড়ি ব্যবসায় বড় ধস নামে। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁতীরা। এ্ সময় দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁতমালিক ও ব্যবসায়ীরা। রমজান শুরুর আগে শেষ হাটে আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি। একজন শাড়ি প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতা জানান, ঈদ মৌসুমে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির দাম বেড়ে যায়। এ সময় আমরা কিছুটা হলেও লাভ করতে পারি। বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করি। বোনাস দিই। অনেকে হাট খরচ উঠাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতি বছর বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেট থেকেও অনেক পাইকার কাপড় কিনতে আসেন। এবার অগ্নিকা-ের দরুন পাইকারদের পাচ্ছি না।
ঢাকা থেকে শাড়ি কিনতে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, এবার টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বেশ সস্তা। দাম বেশি হলে শাড়ি না কিনেই চলে যেতে হতো। কারণ, শহরের মার্কেটগুলোতেও এবার বেচাকেনা কম। এক তাঁতমালিক জানান, ‘রুচির পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামের মহিলারাও শাড়ির পরিবর্তে থ্রিপিস পরছেন।’ যেসব ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় শাড়ি গুদামজাত করে রেখেছিলেন, তাদের মাথায় হাত। যে দামে তারা শাড়ি কিনে কিংবা তৈরি করে জমিয়ে রেখেছিলেন, মৌসুমে এসেও সেই দামেই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
তার পরও সব কিছুকে ছাপিয়ে বাহারি ডিজাইনে বৈচিত্র্যময় শাড়ি তৈরি করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতীরা। সদর উপজেলার তাঁতবহুল গ্রামগুলোর মধ্যে- ধুলটিয়া, বাজিতপুর, খারিন্দা, তারটিয়া, এনায়েতপুর, বেলতা, সন্তোষ, কাগমারী প্রভৃতি ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, নলুয়া, দেওজান, কালিহাতী উপজেলার বল্লা ছাত্তিহাটি, আইসরা প্রভৃতি গ্রামে তৈরি হচ্ছে তাঁতের শাড়ি।
এ ছাড়াও জামদানি, কাতান, হাইব্রিড, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, ডেঙ্গু, রেশম, তসর, কাতান, টিস্যু ইত্যাদি শাড়িও তৈরি করেছেন শ্রমিকরা। তাঁতীরা শাড়ি তৈরি করেছেন খুব দরদ দিয়ে। পুরুষরা তাঁত বুনে যাচ্ছেন আর সহযোগিতা করছেন মহিলারা। তাঁতীরা মনের রঙ মিশিয়ে শাড়ির জমিনে মেশিনের মাধ্যমে নকশা তৈরি করেছেন। টাঙ্গাইল শাড়ির নকশা, বুনন ও রঙের ক্ষেত্রে রয়েছে বিচিত্রতা, যা সবার নজর কাড়তে সক্ষম।
তাঁতমালিক, ব্যবসায়ী ও করটিয়া হাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আনসারী জানিয়েছেন, ২০০ বছরের প্রাচীন করটিয়া হাট শাড়ি বিক্রির প্রধান কেন্দ্র। ঈদ মৌসুমে এই হাটে কয়েক শ’ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ পাইকাররা এসে শাড়ি কিনে নিয়ে যান এই হাট থেকে। ঈদ ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ধারদেনা করে শাড়ি তৈরি করে হাটে শাড়ি তুলেছেন। আশানুরূপ বিক্রি না হলে কিংবা লোকসান গুনতে হলে দুঃখের সীমা থাকবে না। তাঁত আমাদের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রশিল্পের প্রাণ। আমরা আশা করি, সরকার দেশের তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com