২য় দিনেও নওগাঁ থেকে বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার ০৩ এপ্রিল নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপ এবং বগুড়া জেলার বাস মালিকের বিরোধের কারণে নওগাঁ-বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে তাদের দ্বন্দ্বের কারণে বেশি প্রভাব পড়েছে নওগাঁ – বগুড়া যাত্রীদের। ফলে দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদেরকে। অপরদিকে নওগাঁ শহরের বাহিরে পকেট রোড ব্যবহার নিয়ে এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ বলে জানা গেছে। গত বুধবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। সমাধান না হওয়ায় ২য় দিনের মতো নওগাঁ থেকে সরাসরি বগুড়ায় কোনো বাস চলাচল করছে না। গতকাল সরেজমিনে সান্তাহার পশ্চিম ঢাকা রোড নামক স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী পায়ে হেঁটে অথবা অটো চার্জার, রিকসা রিজার্ভ করে নিয়ে আসতেছে বগুড়া ও ঢাকায় যাওয়ার জন্য। সেখানে কথা হয় সুজন সরদারের সাথে। তিনি ৬৮০ টাকা দিয়ে ঢাকার একটি টিকেট কেটে ক্ষোভ ঝারছিলেন সংশ্লিষ্টদের ওপর। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ছেলের বউ ঢাকা যাবে। কিন্তু সান্তাহার পশ্চিম ঢাকা রোড চিনতে না পেরে চলে গেছে পূর্ব ঢাকা রোড নামক স্থানে। আর কয়েক মিনিট পর বাস ছেড়ে দিবে। যদি মিস হয়ে যায়? রাণীনগর উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে বগুড়া যাওয়ার জন্য পূর্বের স্ট্যান্ডে এসেছিলেন কার্তিক। সেখান থেকে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসার কারণে বিরক্ত বোধ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনিও। পরে বাধ্য হয়ে তিনিও ২৪০ টাকা দিয়ে বগুড়ায় যাওয়ার জন্য তিনটি টিকেট কিনলেন। বগুড়া জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্য নির্বাহী সদস্য শেখ ফরিদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সড়ক সম্পাদক নূর আমিন মন্ডল একই সুরে বলেন, তারা আমাদেরকে না জানিয়ে ঢাকায় চলাচলের জন্য বরেন্দ্র এক্সপ্রেস নামের ৪ টি বাস চালু করেছে। সেগুলো আবার শহর থেকে না চালিয়ে সাপাহার থেকে যাত্রী নিয়ে আসতেছে। তাহলে আমরা যাত্রী কোথায় পাবো। শহর থেকে চালালে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। এছাড়া তারা আমাদের শাহ্ ফতেহ্ আলী একটি বাস নজিপুরে আটকে রেখেছে। তাই আমরাও তাদের বরেন্দ্র এক্সপ্রেস নামের একটা বাস আটকিয়ে রাখছি। কি কারণে আপনাদের দ্বন্দ্ব এবং এই দ্বন্দ্বের কারণে জনগণের যে ভাগান্তি হচ্ছে এটা কাদের দোষে বা অবহেলায় হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বগুড়া জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শাহ ফতেহ আলী বাসের মালিক আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আপনারা দু এক জায়গায় ফোন দিয়ে দেখেন কাদের দোষ? তারা আমাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ করে পকেট রোড সাপাহার থেকে চারটি বাস চালু করেছে। কিন্তু আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন গত এক বছর সান্তাহার থেকে কুয়াকাটা একটা বাস চলছে। তাদেরকে বলার পরও তারা নওগাঁ থেকে চালাতে দিচ্ছে না। বরং নওগাঁ থেকে চলাচলের জন্য তারা আমাদের শাহ্ ফতেহ আলী থেকে দুটি গাড়ি চাইছে। তাহলে আমরাও তো দাবি করতে পারি। যেহেতু তারা সাপাহার থেকে তারা চারটি গাড়ি বের করেছে, সেখান আমরাও একটা বাস চালানোর জন্য প্রস্তাব করি। কিন্তু নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপ সেটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা নতুন বাস শহর থেকে চালালে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। চারটা কেন ১০০ টা চালালেও সমস্যা নেই। এছাড়া বাস চালানোর বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে হয়, এই বিষয়ে তারা আমাদের কিছুই বলেনি। এজন্য তাদের বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। এবং তারাও আমাদের একটা বাস আটকে দিয়েছি। এছাড়া তারা হঠাৎ করে আমাদের বাসগুলো আমাদের সীমানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে আমিও চাই এর দ্রুত সমাধান হোক। নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে মুঠোফোনে বলেন, আমরা জেলা মালিক গ্রুপ আলোচনা করে ‘ঈদের আগে নওগাঁ থেকে ঢাকাগামী ৩ টি এসি বাস বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ব্যানারে চালু করি। কিন্তু বুধবার সকালে হঠাৎ করে বগুড়া চারমাথায় আমাদের একটি এসি বাস আটকে দেয় বগুড়া শাহ্ ফতেহ্ আলী বাসের মালিক আমিনুল ইসলামের লোকজন। এরপর আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের জানান, নওগাঁ থেকে কোন এসি বাস বগুড়া হয়ে ঢাকায় যেতে দিবে না। সাপাহার থেকে তাদেরও একটা গাড়ি চলার দাবি জানায়। অথচ শাহ্ ফতেহ্ আলী নামে অসংখ্য এসি বাস নওগাঁ থেকে ঢাকাতে যায়। এবিষয়ে আমরা কিছুই বলিনা। গতকাল যখন আমাদের একটা বাস তারা আটকে দেয়, এজন্য আমরাও তাদের একটা বাস আটকে দিয়েছি। আর কুয়াকাটার বাস অনেক আগেই নওগাঁ থেকে চলছে। এছাড়া আমরাও জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য যেকোনো সময় বসতে রাজি। শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, নওগাঁ থেকে ঢাকাগামী সকল বাস আত্রাই হয়ে নাটোর দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। পাশাপাশি নওগাঁ- বগুড়া রুটে অভ্যন্তরীণ বাসগুলো নওগাঁ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বগুড়ার সীমানায়। আপাতত দুই জেলার সাথে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে উভয়েই বলেন, আমরাও চাই না জনগণ ভোগান্তিতে পড়ুক। তাই আমরা কেন্দ্রের নেতাদের জানিয়েছি। তারা এখন সিদ্ধান্ত নিবেন। তারা যে কোনো দিন বসতে বললে আমরা বসতে রাজি আছি।