মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
নেত্রকোণায় হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান ফরিদপুরে জেলা ও মহানগর মহিলা দলের উদ্যোগে মানববন্ধন রমজানে নিত্য পণ্যের বাজার মনিটরিং করলেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা শ্রীমঙ্গলে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ লামায় হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চেক বিতরণ জামালপুরে রোগীকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জাকাতের টাকা সংগ্রহ অভিযান চাঁদনী হত্যাকা-ের এক দশক: বিচার কি আদৌ মিলবে? নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণের প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের মানববন্ধন চিতলমারীতে এক ভারতীয় নাগরিক হত্যা মামলার আসামী

ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে উপকূলবাসী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুলের আঘাতের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা এলাকার মানুষ। এর মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছে, আগামী ১৩-১৫ মের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ বা ‘মোখা’। আবহাওয়া দপ্তরের এ পূর্বাভাস কপালে চিন্তার রেখা এনে দিয়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের।
এখন মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে চৌচির হয়ে যাওয়া এলাকার বাঁধগুলো দুর্বল হতে শুরু করেছে। ভারী বর্ষণ আর জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে এই বাঁধগুলো কত সময় টিকে থাকবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
খুলনার ভাঙনকবলিত কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লবণাক্ততা এবং প্রচ- গরমে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বালুযুক্ত এসব বাঁধে বৃষ্টির পানি পড়লেই তা গলে যেতে শুরু করে। যে কারণে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, বাঁধ ভাঙলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ধানের। কারণ এখনো মাঠে বোরো ধান রয়েছে। কৃষকরা চেষ্টা করছেন দ্রুততার সঙ্গে ধান কেটে বাড়িতে আনার জন্য।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা আছের আলী মোড়ল ও শোয়েব আক্তার বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে নদীরক্ষার বাঁধগুলো বছরের প্রায় সময় অরক্ষিত থেকে যায়। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকে। এতে জোয়ারের চাপও বেড়ে যায়। তখন বাঁধগুলো টিকে থাকতে পারে না।’ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কয়রা উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাটসংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে অথবা ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গাতিরঘেরী এলাকায় গতবছর একাধিকবার বাঁধ ভেঙেছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা এখানে বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
মহেশ্বরীপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, তার এলাকায় একাধিক স্থানে বাঁধ ধসে গেছে। নদীতে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে গোটা ইউনিয়ন নদীর লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে এলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। বাঁধ স্থায়ী করতে হলে নদী শাসনের কোনো বিকল্প নেই। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের আওতাধীন মোট ৬৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ১০ কিলোমিটার। আর অতিঝুঁকি পূর্ণ তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে কয়রা উপজেলাকে বেশি নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কপোতাক্ষ নদ ও সাকবাড়িয়া নদী পরিবেষ্টিত সুন্দরবন সংলগ্ন এ উপজেলায় একটু জলোচ্ছ্বাস হলে ভালো বাঁধও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বাড়িঘর তলিয়ে যায় নোনাপানিতে। দাকোপ উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন বলেন, কয়রার মতোই তার উপজেলায় নদীভাঙন অনেক বেশি। উপজেলার জালিয়াখালী, মধ্যপানখালী, কালাবগী, সুতারখালী, চুনকুড়ি, ঢাংমারি, জাবেরের খেয়াঘাট, খোনা, গড়খালী, মোজামনগর, ঝালবুনিয়া, দক্ষিণ কামিনিবাসিয়া, উত্তর কামিনিবাসিয়া, বটবুনিয়া, শিবসার পাড়, ভিটেভাঙ্গা, শ্রীনগর, কালীবাড়ি, গুনারী, খলিশা এলাকায় বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। তিনি বলেন, এ এলাকাগুলোতে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
দাকোপের কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পঞ্চন কুমার মন্ডল বলেন, তার ইউনিয়নে একাধিকবার নদী ভাঙন হয়েছে। আইলা আর সিডরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এলাকাবাসীর। দুর্বল বেড়িবাঁধের মধ্যে কোনো রকমে মানুষ টিকে রয়েছেন। আবার যদি ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস হয় তাহলে আবারও ক্ষতি হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভাঙনের পর পাউবো তড়িঘড়ি করে বাঁধ মেরামত করে। কিন্তু তা স্থায়ী কোনো সমাধান বয়ে আনে না। জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। তিনি জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান আজরিয়া বলেন, আমাদের আওতাধীন মোট ৩৭৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ছয় কিলোমিটার। আর অতিঝুঁকিপূর্ণ তিন কিলোমিটার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com