চিকিৎসা একটি সেবা, এটি কোন ব্যবসা নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মানুষের জীবন বাঁচানোর এই মহৎ পেশা ও খাতটি নিয়ে অমানবিক ব্যবসা এবং এমন কি প্রতারণার অভিযোগও ইদানিং পাওয়া যাচ্ছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি উল্লেখ্য করা হয়েছে,বর্তমান একজন রোগীর মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশই ওষুধ ক্রয়ে খরচ হচ্ছে। এতে বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয়ের মুখোমুখি হয়ে বছরে ৮৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন। এই ধারা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত রোগব্যাধি ও মৃত্যু বাড়বে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা। সূত্রে প্রকাশ,এবার খুচরা বাজারে ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। তারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ফার্মেসি মালিকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে একাধিক প্রতিষ্ঠান বিপণন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দাম বাড়ালেও কিছুই জানে না সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। উলটো বলছে দাম বাড়াতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তারা চাপে রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এমনিতেই নিত্যপণ্যের চড়া দামের জেরে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। জুলাইয়ে জীবন-রক্ষাকারী অনেক ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন যদি কোম্পানিগুলো ফার্মেসিতে খুদে বার্তা দিয়ে ফের দাম বাড়ায়, আর প্রশাসন যদি না জানে সেটা অযৌক্তিক। দাম বাড়ানোর আগে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। নিয়মবহির্ভূত দাম বাড়ানো হলে ন্যায়সঙ্গত হবে না। আকস্মিক দাম বাড়ালে অনেক রোগী ওষুধ কিনতে পারবে না। আর ডোজ সম্পূর্ণ না করলে শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র আইয়ুব হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো খুদে বার্তা দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে বিষয়টা তাদের জানা নেই। মোড়কের গায়ের মূল্যের বাইরে বেশি দামে কেউ বিক্রি করতে পারবে না। যে ওষুধ মার্কেটে চলে গেছে এসএমএস দিয়ে সেগুলোর দাম বাড়ানোর এখতিয়ার কোম্পানির নেই। এরকম কোনো তথ্য তাদের কেউ জানায়নি। অধিদপ্তর থেকে নির্ধারণ করা নতুন মূল্য প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকবে। তারপরও কেউ নিয়মের ব্যত্যয় করলে, কারও বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পেলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ্য করা হযেছে,ওষুধ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান দাবি করেন, দাম বাড়ানোর ক্ষমতা তাদের নেই। আবেদন সাপেক্ষে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেয়। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, প্যাকেজিং ম্যাটারিয়াল, পরিবহণ ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রানীতিসহ নানা কারণ দেখিয়ে ফার্মেসিগুলো ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করছে। আমরা চাই যারাই বেশি দামে বিক্রি করুক সেটা যেন ঔষধ প্রশাসনকে জানিয়ে কর্নে। জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় প্রাইস ফিক্সেশন পলিসি অনুসারে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ওষুধের পুনর্র্নিধারিত দাম অনুমোদন হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় করে দাম কিছুটা আপডেট করা হয়েছে। দৈনিকটির অপর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হৃদরোগের মতো একটি জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে প্রতারণা শিকার হচ্ছেন অসহায় মানুষরা। আমরা আশা করি, বিষযটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বে সাথে নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে অসহায জনগণের পাশে দাঁড়াবে। জনগণের প্রতি তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে নিজেদেরকে দায মুক্ত করবে।