জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের এক তরুণ উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলক ভাবে সাম্মাম ফল চাষে সফল হয়ে এবার বাণিজ্যিক ভাবে সাম্মাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। মরুভুমি বা আরব দেশের ফল হিসেবে খ্যাত সাম্মাম বা রক মেলন ফল। জানাযায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকায় এ ফল চাষ হয়। ইউটিউবে এ খবর দেখে তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন এ ফল চাষের উদ্যোগ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মরুভুমির এ ফল চাষ সম্প্রতি বাংলাদেশের শুরু হলেও শেরপুরে এটি প্রথম। তবে ফলন দেখে মনে করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যের এ সাম্মাম চাষ গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে চাষাবাদে লাভবান ও আগ্রহ স্মৃষ্টি করবে স্থানীয় কৃষকদের।
কুমড়া গাছের মতো লতানো গাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে গোল গোল ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল ও ফুল। বাঁশের বাতা আর নেট ব্যাগ বা জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো ক্ষেত যেনো ফলে ভরে রয়েছে। সাম্মাম ফল খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বে এ ফলের চাহিদা রয়েছে। দেশে এটির চাষাবাদ খুবই কম। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মাম বলে, তবে বিভিন্ন দেশে এটি রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানি ডিউ নামেও পরিচিত। সাম্মামের দুটি জাত রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলার গারো পাহাড়ে নককুড়া ইউনিয়নের গ্রাম গোমরা। এ গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন প্রথমে ইউটিউবে দেখেন সাম্মাম ফল খুবই উচ্চমুল্যের একটি ফল। তাই তিনি এ ফল চাষে পরীক্ষামূলক ভাবে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে চলতি মাসের ফেব্রুয়ারি মাসে তার পৈত্রিক ১০ শতক জমিতে ওই বীজ রোপণ করেন। মাত্র ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর পরাগায়নের আরো ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে ফল এবং সর্বশেষ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে সে ফল পাকতে শুরু করেছে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ। আনোয়ারের এ ফল চাষে এ পর্যন্ত খরচ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ফল বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে দের থেকে দুই লক্ষ টাকা। প্রতিটি ফল প্রায় দের থেকে দুই কেজি ওজনের সাইজ হয়েছে। পাইকারি বাজার মূল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি হিসেবে প্রতিটা ফল প্রায় ২ থেকে ৩ শত টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে তার ধারনা।
এদিকে প্রত্যন্ত এ গারো পাহাড়ে আনোয়ারের সাম্মাম চাষে গ্রামের অনেকেই প্রথমে সন্দিহান থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে ওই গাছে প্রচুর ফুল ও ফল দেখে আশ্চর্য হয়েছে গ্রামবাসী। সেইসাথে তার এ ফল চাষে সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই তার বাগান দেখতে এবং এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কারণ গারো পাহাড়ে রয়েছে প্রচুল পতিত জমি। ওই পতিত জমিতে সাম্মাম চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চাচ্ছে কেউ কেউ।
এদিকে আবর দেশের সাম্মাম ফল চাষের খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের মানুষ এবং জেলার বিভিন্ন প্রন্তের মানুষ ছুটে আসছে আনোয়ারের সাম্মাম বাগানের সাম্মাম ফল দেখতে। কেউ তা পরখ করে খেয়ে নিচ্ছে আবার কেউ সে ফল এবং ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে যাচ্ছে।
সাম্মাম ফল চাষে খুব বেশি পানির প্রয়োজন হয়না। তবে জমে থাকা পানি এ চাষে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু গারো পাহাড়ে পানি জমে থাকার কোন সুযোগ নেই বলে এ ফল চাষের বেশ উপযোগী এ পাহাড়ের মাটি। পোকার আক্রমণের জন্য কীটনাশকের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ।
ঝিনাইগাতী শহর থেকে আনোয়ারের সাম্মাম বাগান দেখতে আসা আশরাফুল নামের এক কৃষক বলেন, সৌদি আরবের ফল এখানে চাষ হয়েছে বলে দেখতে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে চাষ করা হয়েছে। নতুন এ ফল দেখে দেখে মন ভরে গেছে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড.সুকল্প দাস জানায়, সাম্মাম চাষ এখনও বাংলাদেশের কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। যেহেতু এটি একটি লাভজন আবাদ তাই আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে এ ফল চাষে তরুণরা এগিয়ে আসছে এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নিরাপদ ফল উৎপাদনে সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।