আত্মহত্যার সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত কিন্তু কেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এসে অসীম সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়েও একজন শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে যাচ্ছে? গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দিবাগত রাতে, ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তার ১ দিন আগে ৭ জুন মৌমিতা মোউ নামের আরেক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আত্মহত্যাই কি সমস্যার সমাধান? সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার ১০১টি ঘটনা ঘটে। সরকারি চাকরির ভেতরেই কি লুকিয়ে আছে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ? দেশের তরুণ সমাজ আর তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সরকারি চাকরি নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। দিন দিন সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের আগ্রহ যেন ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। ছেলেমেয়েরা কোনোমতে অনার্স কমপ্লিট করার অপেক্ষায় থাকে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী অনার্স ডিগ্রি নিচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার দেয়ার দেওয়ার জন্য। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানাবিধ সমস্যা থাকবেই। পরিবার ভেঙে যেতে পারে, সমাজ ও রাষ্ট্র সবার সমস্যার সমাধান নাও দিতে পারে। তাই বলে আত্মহত্যা সমস্যা থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মানোন্নয়ন করতে হবে, এতে কোনো শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে শিক্ষকরা সহজেই বুঝতে পারবেন এবং হতাশা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। কোনো শিক্ষক যেন কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ না হন, শিক্ষকরা যেন হন শিক্ষার্থীদের সবথেকে বড় আশ্রয়, স্বপ্ন গড়ার কারিগর। সর্বোপরি আমাদের একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে জীবনের জন্য স্বপ্ন, স্বপ্নের জন্য জীবন নয়। লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা