আজ ৪ জুলাই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস। এ উপলক্ষে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সারা আমেরিকায় সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে শনিবার ১ জুলাই থেকে এবং তা চলবে বুধবার পর্যন্ত। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ উপলক্ষে ১ জুলাই সাউথ ক্যারলিনার পিকেন্স সিটিতে বড় ধরনের সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রায় আড়াই শত বছরের পুরনো হলেও এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের অঙ্গিকার হবে আমেরিকার সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করার। কারণ, জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন ডেমক্র্যাটরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দিবসটি অতিবাহিত করবেন হোয়াইট হাউজে বিশিষ্টজনদের সাথে। ওয়াশিংটন ডিসিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে আতশবাজিও প্রত্যক্ষ করবেন হোয়াইট হাউজ থেকেই।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটিতে গত ৫০ বছরের মত ন্যায় এবারই ফোর্থ জুলাই সন্ধ্যায় জমকালো আতশবাজি অনুষ্ঠিত হবে। ৪০ লাখের বেশি মানুষ এবারও ইস্ট রিভারের ৪টি বার্জ থেকে চোখ ধাঁধানো এই আতশবাজি প্রত্যক্ষ করবেন বলে আয়োজক বাণিজ্যিক সংস্থা ‘ম্যাসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরবাইরে ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, আটলান্টিক সিটিসহ বিভিন্ন সিটিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আতশবাজি ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, বস্টন, মায়ামী. লস এঞ্জেলেস, শিকাগো, টেক্সাসসহ বিভিন্ন সিটিতে।
আমেরিকা যেভাবে স্বাধীন হলো: ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল ধরে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছিল, যাকে আমেরিকার বিপ্লবী যুদ্ধ বলেও বর্ণনা করা হয়। একসময় ব্রিটিশ কলোনি ছিল আমেরিকা। ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া করারোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে উত্তর আমেরিকার ১৩টি কলোনি স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৭৭৬ সালের জুলাই মাসে। যদিও উভয় পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছিল ১৭৭৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে। টানা কয়েক বছর যুদ্ধের পর ফরাসি বাহিনী ও জর্জ ওয়াশিংটনের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা চার্লস কর্নওয়ালিস। তবে আমেরিকার যুদ্ধ শেষ হলেও আমেরিকার যুদ্ধ সমর্থনকারী দেশ ফ্রান্স, স্পেন ও তৎকালীন ডাচ রিপাবলিকের সঙ্গে ব্রিটেনের যুদ্ধ চলতে থাকে। অবশেষে ১৭৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ট্রিটি অব প্যারিসের মাধ্যমে ব্রিটেন আমেরিকার সার্বভৌমত্ব এবং সীমানা স্বীকার করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ওই চুক্তিটি ১৭৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে পৃথক কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স, স্পেন ও ডাচ রিপাবলিকের সঙ্গে ব্রিটেনের যুদ্ধের অবসান হয়। প্রতি বছর ৪ জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে মার্কিনিরা। কিন্তু ৪ জুলাই কেন আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস হলো? ২ জুলাইয়ে লেখা হয় আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রথম খসড়া। এই লেখনীটির প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও বাক্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরবর্তী দু’দিন ধরে নানা রকম মাজাঘষার (এডিটিং) পর, ৪ জুলাই কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস খসড়ার প্রতিটি শব্দকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে (অ্যাপ্রুভ্ড দি ফাইনাল ওয়ার্ডিং অব দি ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেনডেন্স)। সংশোধন ও পরিমার্জন করা এই খসড়াটি সঠিক ও চূড়ান্ত (কারেক্ট অ্যান্ড ফাইনাল) বলে গৃহীত হয় ৪ জুলাই। এবং এভাবে এই দিনটিকেই ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ১৭৭৬ সালের আগস্ট মাসে, এই ঘোষণাপত্রটির খুব সুন্দর করে হাতে লেখা একটি কপিতে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সই করেন। এই দলিলটি এখন ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় সংরক্ষণশালায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এই ৪ জুলাইতে ফিলাডেলফিয়ার জন ডানল্যাপ সাহেব ‘ডিক্লেয়ার অব ইনডিপেনডেন্স’ ঘোষণাপত্রটি প্রথমবারের মতো তার ‘ডানল্যাপ ব্রডসাইড’-এ ছাপান। ব্রডসাইড হলো খবরে কাগজের মতো চওড়া একটা কাগজ, যা এক পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। অন্য পৃষ্ঠা খালি থাকে, যাতে এটাকে দেয়াল, বেড়া বা অন্য কোনো জায়গায় সটকানো বা জোড়া লাগানো (পেস্ট) করা যায়। এই অরিজিনাল প্রিন্টেড কপির এক একটা তখনকার দিনের সব তেরোটি স্টেটেই পাঠানো হয়, যাতে তারা সবাই ঘোষণাপত্রের পুরো কথাগুলো সরাসরি জানতে পারে। এই সব কারণে ৪ জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনটিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে মার্কিনিরা।