বান্দার নেক আমল তিন বিষয়ের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান, ইখলাস ও সুন্নাহ।
ঈমান : ঈমান বলতে বোঝায়- আল্লাহ, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবী-রাসূল, তাকদিরের ভালোমন্দ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনপূর্বক মুখে স্বীকৃতিবাক্য তথা ‘কালেমায়ে শাহাদাহ’ পাঠ করা। শিরক তথা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক না করা। কারণ, ঈমান হলো নেক আমালের মূল ভিত্তি। আল্লাহর কাছে বান্দার ভালো কর্মগুলো পৌঁছার সেতুবন্ধ। ‘পরকালে শুধু অণু পরিমাণ ঈমান দিয়েও অসংখ্য মানুষ জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে’। (তিরমিজি : ২৫৯৩) প্রিয় নবী সা: বলেন, ‘যার শেষ কথা লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (আবু দাউদ : ৩১১৮)
কিন্তু ঈমান না থাকলে দুনিয়ার যত নেক আমল সব বৃথা যাবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কুরআনের ভাষায় সে হবে কাফের কিংবা মুশরিক। কাফেরের আমল হবে পরকালে মূল্যহীন- ‘নিশ্চয় যারা কুফরি করে এবং কাফের অবস্থায় মারা যায় তাদের কেউ পৃথিবীভর্তি স্বর্ণ বিনিময়স্বরূপ প্রদান করলেও তা গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’(সূরা আল ইমরান : ৯১) ‘আর মুশরিকদের আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না’। (সূরা নিসা : ৪৮) অন্যত্র এসেছে, ‘কেউ ঈমান অমান্য করলে, তার কার্যাদি নিষ্ফল হবে। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা মায়েদা : ৫)
সুতরাং ঈমান অমূল্য সম্পদ। ঈমান ছাড়া আমল বিফলে যাবে।
ইখলাস : ইখলাস বলতে বোঝায়- বিশুদ্ধ নিয়তকে। বান্দা তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কথা ও কাজে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে কেবল খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে’। (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ : ৫) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী আপনি বলুন, নিশ্চিয় আমার সালাত, আমার কোরবানি ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। (সূরা আরাফ : ১৬২) সুতরাং বিশুদ্ধ নিয়ত যেকোনো নেক আমলের আগে আবশ্যক। কারণ, সব কাজের প্রতিফল কেবল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল- ‘প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়ত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে’। (বুখারি : ১)
সুন্নাহ : সুন্নাহ বলতে বোঝায়- রাসূল সা:-এর আদর্শকে। তাঁর বর্ণিত আদেশ-নিষেধকে। তিনি যে আমল যেভাবে করতে বলেছেন সেভাবেই তা করা। তাঁর নীতি-আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-কানুন, পথ-মত পরিহার করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসূল তোমাদের যা আদেশ দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা হাশর : ৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করল’। (সূরা নিসা : ৮০) ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে’। (সূরা আহযাব : ২১) রাসূলের আদর্শের পরিপন্থী আমল করলে সেটি হবে বিদআত। বিদআতযুক্ত আমল পরকালে মূল্যহীন হবে।
লেখক : পূর্বজাওয়ার, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ থেকে