সারা দেশে আ লিক ও জাতীয় মহাসড়ক মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার সড়কের দায়িত্বে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। যদিও পুলিশের এই ইউনিটের রয়েছে জনবল সংকট। এ জন্য এই সড়কগুলোর প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দেখভাল করতে পারছেন বাহিনীটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা। বাকি ছয় হাজার কিলোমিটার সড়কে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে জেলা পুলিশ, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য ইউনিট। দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে বিভিন্ন সময় ডাকাতি কিংবা চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয় টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা। এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ গণপরিবহন-সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে চালক, সহকারী, কাউন্টার ম্যানেজারদের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখছে। এ ছাড়া রাত-দিন বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে যাত্রী চলাচল নিরাপদ করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রত্যেক সদস্য। হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় যেসব বাসে ডাকাতি কিংবা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, সেসব বাস মূলত আ লিক মহাসড়কের চলে এবং সেগুলো লোকাল বাস। রাতের বেলায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের আনা-নেওয়ার সময় বিভিন্ন অসাধু ব্যক্তির লালসার শিকার হয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এসব ঘটনা যখন ঘটে, তখন কেউ এগিয়ে আসে না অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বা ৯৯৯-এও কেউ ফোন করে না।
তারা আরও বলেন, রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন গণপরিবহন দিনে কিংবা রাতের বেলায় যখন ছেড়ে যায়, তখন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা যাত্রীদের ছবি তুলে রাখেন। তবে যেসব লোকাল গাড়ি বিভিন্ন মহাসড়কে চলাচল করে, সেগুলোয় নিরাপত্তার অনেক ঘাটতি থেকে যায়।
হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে, এমনকি ডাকাতির মতো ঘটনা ঠেকাতে মহাসড়কগুলোর নির্জন স্থানগুলোয় টহল বাড়িয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এখন রাতের বেলায় পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে মহাসড়কে অবস্থান করেন হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। যদিও রাতের বেলায় মহাসড়কগুলোতে দ্রুতগতির বাস চলাচলের সময় ভেতরে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে কিনা, তা বাইরে থেকে দেখা কিংবা বোঝা সম্ভব হয় না। আবার যখন বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট করে তল্লাশি চালানো হয়, তখন মহাসড়কগুলোয় যানজট সৃষ্টি হয়। তারপরও যান চলাচলে যেন বিঘœ না ঘটে, সেসব বিষয় মাথায় রেখেই বিভিন্ন সময় চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি গণপরিবহন চালক, সহকারী, ম্যানেজারদের ওপরও নজরদারি রাখা হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনে চালক-হেলপার এবং মালিকদের সঙ্গে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা হচ্ছে। যাত্রী নিরাপত্তার পাশাপাশি বাসে থাকা চালক ও হেলপারদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। রাতের বেলায় বাস চালানোর ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে যাত্রী না ওঠানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সচেতন করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিটি বাস টার্মিনাল ছাড়াও মফস্বল এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা হচ্ছে। শুধু পরিবহন-সংশ্লিষ্ট নয়, সড়কে যাতায়াত করা যাত্রীদেরও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত কথা বলছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মহাসড়কগুলোয় যেকোনও ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। আমাদের নিজস্ব জনবলের ঘাটতি থাকার পরও জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে মহাসড়কগুলোয় যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষ করে রাতে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া গণপরিবহনে রাস্তা থেকে যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
যেকোনও ধরনের অসংগতি দেখলে ৯৯৯-এর মাধ্যমে অভিযোগ জানালে হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে মনে করেন হাইওয়ে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ ছাড়া মহাসড়কগুলোতে ডাকাতি কিংবা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঠেকাতে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।- বাংলা ট্রিবিউন