সম্প্রতি বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের একটি তালিকা করেছে ব্রিটেনের দি ইকোনমিস্ট পত্রিকা গ্রুপের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। সেরা ১০টি বাসযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে এশিয়ার একমাত্র শহর জাপানের ওসাকা। ৯৬ পয়েন্ট পেয়ে ১০ নম্বরে রয়েছে শহরটি। ৪৩ দশমিক ৮ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার ১৬৬তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। বাসযোগ্যতার তালিকায় ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে সপ্তম। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো এবং পরিবেশসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তালিকাটি করা হয়। এই তালিকায় সবচেয়ে শেষের দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া ও ইউক্রেনের শহরের সঙ্গে আছে ঢাকা।
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার আধিক্য এর মান ধরে রাখার পরিপন্থি বলে মত দেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, ঢাকার সবচেয়ে বড় বিপদ এর জনসংখ্যা। সরেজমিনে ঢাকার বসিলা, নবোদয়, পীরেরবাগ, মিরপুর অ্যাভিনিউ ফাইভের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে আবাসস্থল, নেই কোনও বিনোদনকেন্দ্র, কিংবা পরিচ্ছন্ন খেলার মাঠ। যে কয়েকটি বস্তি এলাকা রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। শ্রমিক শ্রেণীর প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীকে সুস্থ পরিবেশে আবাস্থল দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন পরিবেশবাদী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’ এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন জানিয়েছেন, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। মোট জনসংখ্যার ৬৮.৩৪ শতাংশ গ্রামা লে এবং ৩১.৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে। সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে ঢাকা এলাকায়। ঢাকা বিভাগে বাস করেন ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন। এই সংখ্যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৬.৮৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বরিশাল বিভাগে। সেখানে মোট জনসংখ্যার ৫.৪৯ শতাংশ, অর্থাৎ বরিশাল বিভাগে বাস করেন প্রায় ৯৩ লাখ মানুষ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তালিকায় জনসংখ্যার আধিক্যে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। ৯৮ দশমিক ৪ পয়েন্ট নিয়ে এ অবস্থান শহরটির। ৪১৪ বর্গকিলোমিটারে বাস করে ১৮ লাখ মানুষ। অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪ হাজার ৩৪৭ জন। বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মানুষের বসবাসের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জনের বসবাস। যেখানে গোটা দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করেন এক হাজার ১১৯ জন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জনশুমারি ও গৃহগণনায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে কোনও পরিকল্পনাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না উল্লেখ করে পরিবেশবাদী আব্দুল মতিন বলেন, ‘একটা শহর বাসযোগ্য করবেন তার নাগরিকের জন্য। যখন বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে আপনাকে কাজ করতে হবে একটি জনঘনত্বপূর্ণ এলাকায়, তখন আপনার কোনও উদ্যোগই কাজ করবে না। ঢাকার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। উন্নয়নে টাকা কম লগ্নি হচ্ছে না, সদিচ্ছারও অভাব নেই। কিন্তু পরিস্থিতি আপনার পক্ষে না। ফলে যারা বাস্তবায়নকারী তারা নানাবিধ চাপ বোধ করেন। সেই চাপ জনসংখ্যার। যারা পরিকল্পনা করেন এবং যারা বাস্তবায়ন করেন, তাদের মধ্যে সমন্বয়েরও অভাব দেখতে পাই আমি।’
যেকোনও শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার অনুপাতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নগর পরিকল্পনাবিদ আখতার হোসেন বলেন, ‘নগরের পরিকল্পনার কিছু সূচক থাকে। সেই সূচক অনুযায়ী আপনি এলাকা, বাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য সুবিধা বণ্টন করবেন। ঢাকার জনসংখ্যা এত বেশি যে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এখানে অপ্রতুল।’ একটি আদর্শ শহরে কী পরিমাণ মানুষের বাস থাকতে পারে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাধারণত বড় শহরে প্রতি একর ঘনত্বে দেড়শ থেকে ২শ মানুষ থাকার কথা। সেখানে ঢাকায় কোনও কোনও স্থানে ৬শ পর্যন্ত মানুষ রয়েছে। আমাদের মানুষ অনেক বেশি, সে অনুযায়ী সুযোগ- সুবিধার ব্যবস্থা নেই। ফলে ঢাকার বাসযোগ্যতা হারানোর পেছনে প্রধানতম কারণ এর জনসংখ্যা।’