এক সময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি। ২০১২ সালে তিনি গড়ে তুলেন ডাকাত দল। প্রায় এক যুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছে তার দলের সদস্যরা। এ পর্যন্ত ৭টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় শহিদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার দলের মোট সাতজন ও অপর একটি গ্রুপ ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আরো একটি দলের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই দলই একে অপরের পরিচিত। গত সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকা বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপি ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, শহিদ মাঝি এক সময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতো। ২০১২ সালে সে অন্যদের বুঝিয়ে ডাকাতদল তৈরি করে। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। আমরা ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের নাম পরিচয় পেয়েছি, তাদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হারুন বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলার তদন্তে শহীদ মাঝি ও তার দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করি। এই মামলার তদন্তাকালে ৩০০ ফিট অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরেকটি গ্রুপের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, দুটি ডাকাত দলই একে অপরের পরিচিত। আমরা তৃতীয় আরেকটি দলের সন্ধানও পেয়েছি।
গ্রেপ্তার সদস্যরা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহীদ মাঝি, সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মোঃ কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো: মাকসুদুল মোমিন অরফে শামীম, মোঃ হাসান, মো: নুরুল ইসলাম, মোঃ খলিলুর রহমান, মোঃ আকরাম হোসেন, মোঃ দ্বীন ইসলাম অরফে কাউছার আহম্মেদ, মোঃ ইলিয়াছ আহম্মেদ অরফে নিরব, মোঃ ফরহাদ আলী, মোঃ রিয়াজ হোসেন হাওলাদার অরফে রিয়াজুল, মোঃ শফিকুল ইসলাম লিটন, মোঃ সেরাজুল ইসলাম, মোঃ জহিরুল ইসলাম পিন্টু। তাদের কাছ থেকে ৩০ টি মোবাইল ফোন, ১টি মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, গত ১৭ই জুন আব্দুল আজিজ পল্টন থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে খিলক্ষেতের বাসার যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৮টার দিকে জিয়া কলোনী এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ব্যক্তি মাইক্রোবাসের মাধ্যমে তার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামি ডিবির পোশাক পরা অবস্থায় এবং ডিবি পরিচয়ে আজিজকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। হাত, পা ও চোখ বেধে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে থাকা কাঁধ ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন এবং তার বিকাশে এজেন্ট নাম্বার পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে রাত ১০টার দিকে রূপগঞ্জের কা ন পৌরসভার অন্তর্গত চরপাড়া সাকিনস্থ রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে যায়। এঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন আজিজ। ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম ঘটনা তদন্ত করে ডাকাত দলটিকে শনাক্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে।
ডিবি জানিয়েছে, ডিবি পরিচয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা তারা পারস্পরিক যোগসাজশে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক এলাকায় বিশেষ করে মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান থেকে কোন ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের টার্গেটকে ফলো করে। ২-৩ জন মোটর সাইকেল নিয়ে টার্গেটের পিছু নেয়। পথে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের অগ্রগামী টিম প্রস্তুত থাকে। মোটরসাইকেল টিমের তথ্যমতে সুবিধাজনক জায়গায় মাইক্রোবাস এসে টার্গেটকে গতিরোধ করে ভিকটিমকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং ভিকটিমের কাছ থেকে সর্বস্ব লুঠিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে যায়।