‘আমার আব্বা ভ্যান চালক, প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গেছিলাম কিছু টাকা কম নিতে। তিনি বললেন কম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি বললাম, দেখেন স্যার যদি কোন সুযোগ থাকে কিছু টাকা কম নিলে আমি পরীক্ষা টা দিতে পারতাম। জবাবে স্যার বললেন-বেশি কথা বললে টাকা আরও বাড়বে, টাকা দিতে না পারলে পড়ালেখা ছেড়ে দাও। কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের এমন কথা শুনে পাহাড়সম কষ্ট আর হতাশা নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. মাইনউদ্দিন(১৭)। তার কথাগুলো মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে আরেকজন। পরে ভিডিওটি রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। মাইন উদ্দিন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর আলগী গ্রামের ভ্যান চালক মো. লাল মিয়ার ছেলে। পরে এবিষয়ে (১৭ জুলাই ২০২৩) রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন। মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমাদের কলেজের প্রথম বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ আমার ৪ হাজার ১০০ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। আমার আব্বা একজন ভ্যান চালক। দিন আনে দিন খায়। আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বলি-স্যার কিছু টাকা কম নেন, আমার আব্বা গরীব মানুষ। তিনি (অধ্যক্ষ) বললেন, টাকা কম নেওয়ার সুযোগ নেই। টাকা দিতে না পারলে পড়ালেখা ছেড়ে দাও। পরে উপায় না পেয়ে এলাকার এক বড় ভাইকে নিয়ে যাই। তিনি কলেজের অন্য কয়েকজন স্যারকে কিছু টাকা কম নেওয়ার সুপারিশ করলেও তারা তা মানেননি। মাইনউদ্দিন আরও বলেন ,আমার পরীক্ষার জন্য আব্বা একজনের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা, আরেকজনের কাছ থেকে ১০০০ টাকা দেনা করেন। আর আমাদের ঘরে থাকা কিছু টাকা লাগিয়ে মোট ৩ হাজার টাকা দেন আমার পরীক্ষার জন্য। তিন হাজার টাকা নিয়ে স্যারের কাছে গেলেও তিনি এক টাকা কম হলেও পরীক্ষা দিতে দিবেন না বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার ওই বড় ভাই বলেন, টাকার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া এবং টাকা দিতে না পারলে ছাত্রকে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা একজন কলেজের অধ্যক্ষ কীভাবে বলে? বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা জানতাম গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেতন ছাড়াও পড়ানোর সুবিধা দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই কলেজে দেখছি তার উল্টো। আমি সুপারিশ করলেও তারা তা মানেননি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমার দাবী ছেলেটিকে যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং কলেজে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এবিষয়ে আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, সকল পরীক্ষার্থীদেরকেই কম-বেশি বেতন মওকুফ করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ কমিটির সভাপতি মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।