বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার বাংলাদেশ ব্যাংকের আহ্বান ১৫তম জাতীয় সিনিয়র ক্লাব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় শাম্মী সুলতানার তিনটি অনন্য রেকর্ড জনপ্রশাসন সংস্কারে নাগরিকরা মতামত দিতে পারবেন যেভাবে প্রফেসর তরুণ কান্তি বড়–য়ার রেক্টর পদে যোগদান উপলক্ষে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভা হাসিনার মতো ’৭১ সালে শেখ মুজিবও পালিয়ে ছিলেন: মির্জা ফখরুল মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী আগামী ২৬ নভেম্বর শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলা বজ্রপাতে মাঠেই মারা গেলেন ফুটবলার মার্কিন নির্বাচন : কার জয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে? ৮ গোপন আটককেন্দ্রের সন্ধান

কুরআন বোঝা ও তিলাওয়াতের কল্যাণ

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩

নবী রাসূলগণকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন ধর্মগ্রন্থ বা সহিফা দিয়ে যথা- তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছে হজরত মূসা আ:-এর ওপর, জাবুর হজরত দাউদ আ:-এর ওপর, ইঞ্জিল হজরত ঈসা আ:-এর ওপর এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর, যিনি নবী-রাসূলদের ইমাম।
যেহেতু কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে, যে ভাষাটি বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকেরই অজানা, তাই আমাদের মধ্যে যারা আরবি ভাষায় পারদর্শী তারাই জনসাধারণের উপস্থিতিতে কুরআন আলোচনা করেন তাদের জ্ঞান লাভের জন্য। কুরআনের জ্ঞান বিশাল সম্পদ। কারণ কুরআনের জ্ঞান দিয়ে আমরা পেতে পারি সঠিক পথের সন্ধান যার শেষ প্রান্তে জান্নাত অবস্থিত। অর্থাৎ কুরআন থেকে আমরা জানতে পারব আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা অথবা আমাদের করণীয় এবং বর্জনীয়। ফলে আমরা বাস্তবায়ন করব যা করণীয় বা সৎ কাজ এবং পরিত্যাগ করব যা বর্জনীয় বা অসৎ কাজ। এমতাবস্থায় আমরা ইনশাআল্লাহ হতে পারব সত্যিকার মুসলিম এবং আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে দান করবেন জান্নাত। অপর দিকে আলোচকরা হবেন আল্লাহর অতি পছন্দনীয় গোলাম। আল্লাহর অতিশয় উৎসাহব্যাঞ্জক বাণী- ‘ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে (অর্থাৎ তার কথাটিই সর্বোত্তম এবং সঙ্গত কারণে সে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত), যে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকে (ধর্মীয় বিধানাবলি বাস্তবায়নের জন্য), সৎকর্ম করে (সে শুধু অন্যকে সৎকর্মের দিকে ডাকে না বরং নিজেও সৎকর্ম করে) এবং ঘোষণা দেয় যে, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মিম সিজদাহ-৩৩)।
রাসূল সা: বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজ্ঞানী মানুষ হয়েছেন কুরআনের পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। কুরআনের সর্বপ্রথম যে তাৎপর্যপূর্ণ বাণীটি অবতীর্ণ হয়েছে তা হলো- ‘পড়–ন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপি- থেকে’ (সূরা আল-আলাক : ১-২)।
লক্ষণীয়, কত বড় মহামূল্যবান নির্দেশ আল্লাহর সর্বাগ্রে অর্থাৎ কুরআন পাঠ করা জ্ঞানার্জন করা এবং তা বাস্তবায়ন করা উভয় জগতের কল্যাণের স্বার্থে। তা ছাড়া এ অবস্থা দ্বারা প্রমাণিত হয় কুরআন পাঠের ও কুরআনের জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
আল্লাহ ছিলেন তাঁর রাসূল সা:-এর কুরআনের শিক্ষক ও বিশ্ববাসীর বিভিন্ন ভাষার শিক্ষক। আল্লাহর বাণী- ‘দয়াময় আল্লাহ! তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন রাসূল সা:-কে। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনি তাদেরকে শিখিয়েছেন ভাষা’ (সূরা আর-রাহমান : ১-৪)।
লক্ষণীয়, কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ এবং রাসূল সা: সর্বশেষ নবী ও রাসূল যার পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী-রাসূল আসবেন না। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ সর্বশেষ নবীকে শিখালেন এবং বিশ্ববাসীকে শিখালেন বিভিন্ন ভাষা যদ্বারা তারা সর্বোচ্চ অবদান বিশ্বে প্রদান করতে সক্ষম হলো এবং সক্ষম হলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ জান্নাতবাসী হওয়ার।
কুরআনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যক্ত হয়েছে কুরআনের শুরুতেই আল্লাহর বাণী- ‘এই সেই কিতাব (কুরআনুল কারিম) যাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই (শতভাগ সত্য ও সঠিক) মুত্তাকিন বা আল্লাহভীরুদের জন্য হিদায়াত (অর্থাৎ জান্নাত অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখায়) যারা (মুত্তাকিরা) অদৃশ্য বিষয়সমূহে বিশ্বাস করে এবং নামাজ কায়েম করে আর তাদেরকে যে জীবিকা বা সম্পদ দেয়া হয়েছে, তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে সেই কিতাবের প্রতি যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর সেই কিতাবের প্রতিও যা আপনার আগে নাজিল হয়েছে। আর আখিরাতকে যারা সুনিশ্চিত বিষয় বলে বিশ্বাস করে’ (সূরা বাকারা : ১-৪)।
কুরআনের শুরুতেই কুরআনের চরম পরম উপকারিতাটি বা কল্যাণটি বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহভীরুদের কুরআন হিদায়াত দান করে। তা ছাড়া দু’টি ইবাদতের কথাও উল্লেখ করেছেন যা প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের চারটি ফরজ ইবাদতের মধ্যে। সালাত সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক আদায়কৃত ইবাদত (প্রতিদিন পাঁচ বেলা) পক্ষান্তরে জাকাত প্রদানকারীর সম্পদকে পবিত্র এবং জাকাতগ্রহীতার দারিদ্র্যবিমোচন করে।
কুরআনের তাৎপর্য ও মর্যাদা অন্যতম প্রমাণ দু’টি আল্লাহর বাণী। প্রথমবাণী- ‘যারা পূতঃপবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা (পবিত্র কুরআন) স্পর্শ করে না’ (সূরা আল-ওয়াকিয়া-৭৯)। অর্থাৎ সালাত আদায়কারীদের যে পবিত্রতা প্রয়োজন ঠিক একই পবিত্রতা কুরআন স্পর্শ করে পাঠকারীদের থাকতে হবে। কুরআনের মর্যাদা, অপবিত্র এবং বেঅজু অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, প্রমাণ উপরিউক্ত আয়াত। দ্বিতীয় বাণী- ‘যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করো আর নীরবতা বজায় রাখো যাতে তোমাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়’ (সূরা আল-আরাফ-২০৪)।
আয়াতদ্বয়ে কুরআনের তাৎপর্য মর্যাদা প্রমাণিত। স্বশব্দে কুরআন পাঠ করলে অবশ্যই আমাদেরকে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। অর্থ জানা থাকলে তার প্রতিও লক্ষ রাখতে হবে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই কথা বলা বা শব্দ করা যাবে না।
আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা- তিনি কুরআনের সংরক্ষক সর্বাবস্থায় আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন (জিকর) নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক’ (সূরা হিজর-০৯)। যদি বিশ্বের সব কুরআন সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয় বা আগুনে পোড়ানো হয় তাহলে কুরআন কি নিশ্চিহ্ন হবে? নিশ্চই না, কারণ লাখ লাখ হাফেজে কুরআনের সিনায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত গুণাবলি অবলম্বনে সৃজিত প্রযুক্তিতে কুরআন সংরক্ষিত এবং তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ। মানবজাতির ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক জীবন কল্যাণ ও সফলতার সাথে প্রবাহের জন্য এমন কিছু নেই যা পবিত্র কুরআনে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর বাণী- ‘হে রাসূল! আমি আপনার প্রতি এ কিতাব নাজিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ (সূরা আন-নাহল-৮৯)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে কত উঁচুস্তরের কল্যাণকামী তা প্রমাণিত হয় তার এই বাণীতে- ‘আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি’ (সূরা আল-কামার-৪০)?
আল্লাহর অসীম রহমত বা দয়া তার বান্দাদের জন্য তিনি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন উপদেশ গ্রহণের জন্য। কুরআন সত্যিই সহজ এবং আল্লাহর আদেশকৃত কর্মকা- নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কল্যাণকর ও শান্তির কারণ এবং নিষিদ্ধ কার্যসমূহ অকল্যাণকর ও অশান্তির কারণ। আল্লাহ যে প্রশ্ন করেছেন, ‘উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ তার প্রশ্নে আমরা জবাব দেবো উপদেশ গ্রহণকারী হিসেবে আমরা আছি আমাদেরই কল্যাণের স্বার্থে। কুরআনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপকারিতা- এমনকি না বুঝেও কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকলে প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে ১০ নেকি পাওয়া যায়। রাসূল সা: এর বাণী- ‘যে কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রত্যেকটি নেকি ১০টি নেকির সমান’ (তিরমিজি)। দয়ালু আল্লাহ যদি কুরআনসহ রাসূল সা:-কে দয়া করে প্রেরণ না করতেন তাহলে অন্ধকার যুগ হয়তো বা ঘোর অন্ধকার যুগে পরিণত হতো। ( দৈনিক নয়াদিগন্ত অন লাইনের সৌজন্যে) লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com